একটা বিদ্যালয়ের কথা বলতে গেলেই বিদ্যালয় পরিকাঠামো, শিক্ষক এবং সঙ্গে সঙ্গে শিশুর কথা উঠে আসে। প্রত্যেক শিশু একই পরিবেশ থেকে উঠে আসে না। কেউ আসে বর্ধিষ্ণু, শিক্ষালাভের সুযোগ পাওয়া অগ্রসর পরিবার থেকে, আবার কেউ আসে সম্পূর্ণ বিপরীত এক পরিবেশ থেকে। ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশ, ভিন্ন ভিন্ন পরিবার থেকে উঠে আসার ফলস্বরূপ তাদের ক্ষমতার মানও ভিন্ন ভিন্ন।
শিশুদের কথা প্রসঙ্গে যেটা সব চেয়ে বেশি উঠে এসেছে সেটা হল বেশির ভাগ শিশুই দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা। তাদের মা-বাবারা খাদ্যের সংস্থান করেন অক্লান্ত পরিশ্রম করে। শিশুদের অভিভাবকরা প্রায় প্রত্যেকই অক্ষরবঞ্চিত এবং শিশুদের পড়াশোনার ব্যাপারে তাঁদের অক্ষমতা প্রকট হয়ে ওঠে। এই রকম একটা অবস্থায় ছেলেমেয়েদের প্রায়শই অর্থ রোজগারের আশায় বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত হতে হয় অথবা পড়া ছাড়তে হয়। বেশির ভাগ শিক্ষকই বিদ্যালয়ের একই শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার স্তরের একটা পার্থক্যর কথা বলেছেন। এ রকমই এক শিক্ষক হলেন মুর্শিদাবাদ জেলার ২১ নং, হরিডোবা নতুন পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক গিয়াসউদ্দিন মণ্ডল, যিনি বলেছেন :
‘শহরের এলাকায় যে ছেলেমেয়েরা বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে আসে তাদের বর্ণপরিচিতি বাড়ি থেকে অর্থাৎ বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগেই ঘটে থাকে। তাকে শেখাতে হয় না অ – আ – ক – খ... শেখাতে হয় না কী ভাবে কলম ধরতে হয়, কী ভাবে খাতা ধরতে হয়। অথচ গ্রামে আমাদের মতো বিদ্যালয়ে যে ছেলেমেয়ে ভর্তি হতে আসছে, তার না আছে বর্ণ পরিচিতি, না আছে কলম ধরার অভ্যাস, ফলে যে ছেলেমেয়ের বাড়িতে আগেই বর্ণপরিচিতি ঘটেছে, তাদের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারছে না অন্যরা, ফলে যারা জানে তাদেরই অগ্রগতি ঘটছে দ্রুত। যারা পিছিয়ে পড়লো তারা আরও পিছিয়ে পড়ছে, সরকারি নির্দেশে তাকে সেই শ্রেণিতে রাখা যাচ্ছে না, ফলে কিছু না শিখেই সে পরের শ্রেণিতে চলে যাচ্ছে। ফলে দিন দিন পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে।’
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 8/1/2019