গিয়াসউদ্দিন মণ্ডলের কথা থেকে যা বোঝা যাচ্ছে ‘নো ডিটেনশন নীতি’ বিচ্ছিন্ন ভাবে চালু করার ফলে একটা বড় সমস্যা তৈরি হয়েছে। ভিতের দিকটা শক্ত না করে এই নীতি গ্রহণ করার ফলে অনেক বাচ্চা কিছু না শিখেও ওপরের ক্লাসে চলে যাচ্ছে। তিনি এর সমাধানের হিসেব প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির ভূমিকাটিকে তুলে ধরেছেন। তাঁর কথায়, বর্ণপরিচিতি ছাড়াই প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হলে একটি বড় সময় চলে যায় শুধু বর্ণপরিচিতি ঘটাতে। ফলে কিশয়ল বইটি শেষ না করেই দ্বিতীয় বইটি হাতে পেয়ে যায়, পিছিয়ে পড়া ছেলেমেয়েদের মধ্যে একটি ‘বইভীতি’, ‘না পারার ভীতি’ কাজ করে।
এই রকম কথা শুধু গিয়াসউদ্দিন মণ্ডলের নয়, অনেকেরই। ‘‘শিক্ষার্থীরা বর্ণজ্ঞান, শব্দ চেনা অবশেষে বাক্য তৈরির ক্ষেত্রে খুবই সমস্যায় পড়ে।’’ কথাটি বলেন দক্ষিণ ২৪ পরনার শ্রীকৃষ্ণপুর মনসাপুকুর অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক গোপাল সা। শ্রেণিকক্ষের এ রকমই একটি সমস্যার কথা উঠে এসেছে মুর্শিদাবাদের গোপীনাথপুর ঢিপিডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শ্রী বৈকুণ্ঠ মল্লিক-এর কথায়। তিনি বলেন, ‘শ্রেণিকক্ষে একটা বড় সমস্যা দেখা যায় সেটা হল বিভিন্ন মানের ছাত্রছাত্রী। গণিতের ক্ষেত্রে সমস্যা বেশি হয় এই অ্যাডভান্সড লার্নারদের নিয়ে। তাদেরকে বসিয়ে রাখা যায় না। আবার পিছিয়ে পড়াদের শিখন সামর্থকে তরান্বিত করা একই সময়ে বেশ সমস্যা।’
এই সমস্যাটি অনেকজন শিক্ষকই তাঁদের কথায় উল্লেখ করেছেন। শিশুদের মূল্যায়নপত্রে নাম লিখতে সমস্যা, পড়তে সমস্যা, ইত্যাদি। কিন্তু যেটা গুরুত্বপূর্ণ তা হল, শিক্ষকদের একাংশ সমস্যা হিসেবে ফেলে না রেখে সেটির সমাধান করতে তৎপর হয়েছেন। পিছিয়ে পড়া শিশুদের মান বাড়াতে তাঁরা সচেষ্ট।
কোচবিহার জেলার পেটভাতা শেওড়াগুড়ি এ পি বিদ্যালয়ের শিক্ষক বরুণ মজুমদার পিছিয়ে পড়া ছেলেমেয়েদের সমস্যা সমাধানের জন্য ২য় শ্রেণির শিশুদের আস্তে আস্তে বর্ণ চেনা ও লেখার উন্নতি ঘটানোর জন্য তাদের দুই বর্ণের, তিন বর্ণের, চার বর্ণের শব্দ তৈরি করার ও বলতে পারার চেষ্টা করিয়েছেন। আবার সেই সমস্ত শিশুর ০ – ১০০ পর্যন্ত সংখ্যা লেখার অভ্যাস করিয়েছেন। এই ব্যাপারে তাঁর ব্যক্তিগত অভিমত হল, ‘এই কাজে আমি অনেকটাই সফল হতে পেরেছি।’
গুরুত্বপূর্ণ ভাবে তাঁর লেখায় একটি বিশেষ দিক উঠে এসেছে। এটি হল ‘শিশুরা শুধু যে লিখতে শিখেছে তাই নয়, নিজেদের ভুল নিজেরা ধরতেও শিখেছে।’
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/26/2020