অপর্যাপ্ত বিদ্যালয় গৃহ, সেখানে স্থান সংকুলান হয় না এবং একই শ্রেণিকক্ষে একাধিক ক্লাস করাতে হয়। এই সমস্যা বেশ ব্যাপক, বহু স্কুলে আছে। কিছু কিছু শিক্ষকের যেমন বক্তব্য যে, বিদ্যালয় পরিকাঠামোর জন্য সরকারি ভাবে অনেক আইন করা হয়েছে এ কথা ঠিকই কিন্তু বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন খাতে যে অর্থ বরাদ্দ হয়, তার সুষম বণ্টন হয় না। এই ব্যাপারটি একটি বৃহৎ জটিল সমস্যার আকার ধারণ করেছে। কিন্তু বেশির ভাগ শিক্ষকের মতে ডিস্ট্রিক্ট প্রাইমারি এডুকেশন প্রজেক্টের (ডিপিইপি) সহায়তায় পরিকাঠামোগত দিক থেকে তাঁরা যথেষ্ট সাহায্য পেয়েছেন। পরবর্তী কালে সর্ব শিক্ষা মিশন থেকেও অতিরিক্ত ঘর তৈরি এবং অন্যান্য বেশ কিছু খাতে টাকা পাওয়া গেছে, যা থেকে বেশ কিছু প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিকাঠামোগত দিক থেকে ভালো উপকৃত হয়েছে। বিদ্যালয় পরিকাঠামোর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল বিদ্যুৎ। অধিকাংশ বিদ্যালয়ে এখনও বিদ্যুৎ এসে পৌঁছয়নি। শিক্ষকদের লেখাগুলি থেকে জানা যাচ্ছে যে, শতকরা ৫০ শতাংশ বিদ্যালয়ে এখনও বৈদ্যুতিকরণ হয়নি। শিক্ষকদের কথা অনুযায়ী গ্রীষ্মের প্রখর দুপুরে যখন তাঁরাই আর পেরে ওঠেন না তখন এই শিশুগুলির অবস্থা যে কী করুণ হয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। গোদের উপর বিষফোঁড়া। কিছু কিছু শ্রেণিকক্ষের চাল আবার অ্যাসবেসটসের, যেখানে রৌদ্রের তাপে বিদ্যালয় চালানোই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। রায়গঞ্জের পশ্চিম গোপালপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পলাশ সরকারের কথা অনুযায়ী ‘যখন গ্রীষ্মের দাবদাহ শুরু হয় তখন একটু বাতাসের জন্য জীবন হাঁকপাঁক করে তখন আমরা বদ্ধ ঘরে বসে সেদ্ধ হতে থাকি, ছাত্রছাত্রীদের অসহায় অবস্থা দেখে ভাবি আমি এক জন পূর্ণ বয়স্ক মানুষ হয়েও এই গরম সহ্য করতে পারছি না তা হলে শিশুদের অবস্থা কেমন? তারা কী করবে?’ বিষ্ময়ের শেষ এখানেই নয়। শীত নিবারণের ব্যবস্থা শিক্ষক হয়তো করতে পারেন না, কিন্তু গরম নিবারণের জন্য শিক্ষকরা ব্যবস্থা করতে চাইলেও তাঁরা তা পারেন না। কারণ বিদ্যুতের খরচ কে দেবে?
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 5/26/2020