শিক্ষকদের লেখাগুলি থেকে জানা যায় শিক্ষকরা কী ভাবে নিজেদের চেষ্টায়, উদ্যোগে, পরিশ্রমে শিশুদের ভাষাগত ব্যবধান দূর করে, তাদের নিয়মিত খেলাধূলার ব্যবস্থা করে বা আরও বিভিন্ন ভাবে বিদ্যালয়ে টেনে আনার মতো কাজকর্ম করে শিশুদের বিদ্যালয়ে উপস্থিতি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। পরিকাঠামোগত উন্নতিও যে কী ভাবে শিশুর উপস্থিতি বাড়াতে পারে তা আমরা আগেই দেখেছি। এরই অন্য একটা নমুনা তুলে দেওয়ার লোভ সম্বরণ করা যাচ্ছে না। পুরুলিয়া জেলার শিক্ষক উত্তম কুমার মাঝি লিখেছেন :
‘বিদ্যালয়ে আমি যখন যোগদান করেছিলাম তখন ছাত্র সংখ্যা ছিল ২৪৭ জন, কিন্তু খুব সম্ভবত তার অর্ধেক ছাত্র বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকত। কারণ একটাই, শিক্ষকের অভাব। পড়াশোনা ঠিকমতো হত না। কিন্তু পরে তিন জন শিক্ষক হওয়ায় ধীরে ধীরে ছাত্র সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং যখন বিদ্যালয়ে ৪ জন শিক্ষক হয়, তখন ছাত্র সংখ্যা প্রায় মূল ছাত্র সংখ্যার ৮৫ শতাংশ হয়ে দাঁড়ায় এবং বিদ্যালয়ে ভর্তির সংখ্যাও বাড়তে থাকে। এখন বিদ্যালয়ে ছাত্রসংখ্যা ২৯৭ জন। শিশুদের আমরা এবং অভিভাবকগণ মিলে বিদ্যালয়মুখী করতে পেরেছি।’
ভাববার বিষয় হল, যথেষ্ট শিক্ষক না থাকা মানে পড়াশোনা ঠিকমতো না হওয়া। আর পড়াশোনা ঠিকমতো না হওয়া মানে ছাত্রছাত্রী না আসা। সুতরাং ছাত্রছাত্রীদের অনুপস্থিতির অন্যতম কারণ যথেষ্ট শিক্ষক না থাকাও।
কিন্তু সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে যে, এমন কোনও শিক্ষকই পাওয়া যায়নি যিনি লিখেছেন যে শিশুদের অনুপস্থিতির সমস্যাটি তাঁর বিদ্যালয়ে কোনও সমস্যা নয়। বিদ্যালয়ে শতকরা ৯৫ ভাগ হাজিরা থাকা সত্ত্বেও অনুপস্থিতির সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে দেখা গেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ঝন্টু প্রামাণিকের মতো শিক্ষককেও। তিনি লিখেছেন, ‘বর্তমানে আমার বিদ্যালয়ের প্রায় ৯৫ শতাংশ শিশুকে নিয়মিত বিদ্যালয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি ... কিন্তু, তবু সামাজিক কোনও ছোট অনুষ্ঠান হলে উপস্থিতির হার কমে যায়।’ এই যে ছাত্রছাত্রীদের অনুপস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ, এটা প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে একটা ইতিবাচক দিক। এ থেকেই প্রমাণ হয়, শিক্ষক শিক্ষা সুনিশ্চিত করা নিয়ে চিন্তিত। এটা শিক্ষা ক্ষেত্রে একটা অগ্রগতির লক্ষণ।
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/16/2020