এই লক্ষণ থাকাটা এক ব্যাপার, আর সেই প্রণোদনাকে পুরোপুরি বাস্তবায়িত করতে পারা আর এক ব্যাপার। ফলে, উপস্থিতি বাড়ানোর ব্যাপারটা নিয়ে সব দিক দিয়েই চেষ্টা করতে হবে। উপস্থিতির ক্ষেত্রে যেটা প্রধান প্রবণতা, সেটা হল বাড়াবাড়ি রকমের অনুপস্থিতি যেমন নেই তেমনি আবার প্রায় ১০০ শতাংশ উপস্থিতির কথাও খুব কম। অর্থাৎ, এখনও একটা অংশের উপস্থিতি সুনিশ্চিত করার কাজটাতে অনেক পথ যেতে হবে। নিয়মিত উপস্থিতি ছাড়া যে পঠনপাঠন এগোতে পারে না, তার একটা বাস্তব অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়। পুরুলিয়া জেলার শিক্ষক শুধাংশু ভট্টাচার্য লিখেছেন :
‘আমাদের প্রথম সমস্যা শিশুদের অনিয়মিত উপস্থিতি। শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের যা অসুবিধা হয়, তা আমি সামান্য উদাহরণ দিয়ে বোঝাবার চেষ্টা করছি। যেমন চতুর্থ শ্রেণিতে বিবেকানন্দের ছেলেবেলার দু’টি প্যারাগ্রাফ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলাম এবং পরের দিন আবার আলোচনার প্রস্তুতি নিলাম। দেখা গেল আমার চতুর্থ শ্রেণির মোট ছাত্রছাত্রী ৩৫ জনের মধ্যে সেই দিন উপস্থিত ছিল ২৫ জন। আবার পরের দিনও উপস্থিত হল ২৫ জন। কিন্তু প্রথম দিন যে দশ জন অনুপস্থিত ছিল তার মধ্যে ৭ জন দ্বিতীয় দিন উপস্থিত, আবার প্রথম দিনের যে ২৫ জন উপস্থিত ছিল তার মধ্যে ৭ জন অনুপস্থিত। ফলে এই ৭ জনের নিকট দ্বিতীয় দিনের পাঠ সম্পূর্ণ নতুন। তাই শ্রেণিকক্ষের পাঠদানও সম্পূর্ণ হল না। গণিতের ক্ষেত্রে এই ধারাবাহিকতা বজায় না থাকায় আরও অসুবিধা।’
শিশুর অনুপস্থিতির কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কোচবিহার জেলার মাটিগাড়া এ পি স্কুলের শিক্ষক অনন্ত মোদক লিখেছেন, ‘বিদ্যালয়টি তামাক চাষ বেষ্টিত এলাকা, তাই তামাক চাষের সময় ছাত্রছাত্রীদের নিয়মিত ভাবে বিদ্যালয়ে পাই না। অভিভাবকগণের সাথে যোগাযোগ করলে স্পষ্টতই বলেন, এ ছাড়া আমাদের উপায় নাই।’ জলপাইগুড়ি জেলার শিক্ষক সৌম্যজিৎ বসু লিখেছেন, ‘ছোট ছোট ভাইবোনকে বিদ্যালয়ে নিয়ে আসার ফলে ছাত্রছাত্রীদের মনোযোগ পড়ালেখার দিকে না থেকে ভাইবোনদের দিকেই বেশি থাকে। ... ভাইবোনদের বিদ্যালয়ে আসতে বারণ করা হলে শিক্ষার্থীরাও বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দেয়, কারণ তারা বাড়িতে ভাইবোনদের দেখাশোনা করে।’
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 9/15/2019