কিন্তু প্রায় সমস্ত কর্মশালা থেকেই বেসরকারি বিদ্যালয়ের জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুভর্তি কমে যাওয়ার সমস্যার কথা উঠে আসাটি, রীতিমত উদ্বেগজনক। শিশুভর্তি সম্পর্কিত কোনও না কোনও প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন এমন ৫৯ জন শিক্ষকের মধ্যে সব চেয়ে বেশি শিক্ষক (প্রায় ৩৪ শতাংশ) এই সমস্যাটি নিয়ে তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা আলোচনা করেছেন। অভিভাবকদের শিশুকে প্রাইভেট স্কুলে ভর্তি করার এই প্রবণতার কারণটি সম্পর্কে শিক্ষকদের মধ্যে মতামতের পার্থক্য আছে। তবে অনেক শিক্ষকই মনে করেন যে, প্রাইভেট স্কুলে প্রাক–প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা থাকাটা ঐ স্কুলগুলির দিকে অভিভাবকদের ঝুঁকে পড়ার প্রবণতার অন্যতম একটি কারণ। পরিকাঠামোগত সমস্যাও প্রাইভেট স্কুলের দিকে অভিভাবকদের ঝুঁকে পড়ার কারণ হতে পারে বলে কেউ কেউ লিখেছেন। কোচবিহার জেলার ছাট-জোড়পাটকি স্পেশ্যাল ক্যাডার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শ্রী অমৃত বর্মনের লেখা থেকে জানতে পারা যায় —
‘আমার স্কুলে ছাত্রছাত্রী প্রতি বছরই ৩০০-এর অধিক। আমি একাই পাঠদান করতাম। ফলে আমার স্কুলের পাশাপাশি সচ্ছল অভিভাবকরা তাঁদের ছেলে- মেয়েদের বেসরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তি করাতেন। তাই তাঁরা বেসরকারি স্কুলে বাচ্চাকে পাঠাতেন। বৎসরান্তে তাঁদের অভিজ্ঞতা হয় যে আমি একাই যতটুকু শেখাতে পারি, বেসরকারি নিবেদিতা স্কুলে ততটুকুও হয় না। ফলে পরের বছর আমার স্কুলে ভর্তি করান, এ রকম বেশ কয়েক জন ছাত্রছাত্রী আছে।’
যদিও অমৃত বর্মন এ ক্ষেত্রে তাঁর নিজস্ব উদ্যোগ দিয়ে পরিকাঠামোর এই অভাবকে ভরাট করে প্রাইভেট স্কুলের মোকাবিলা করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু পরিকাঠামোর মতো এই ধরনের মৌলিক সমস্যার উপযুক্ত সমাধান না হলে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত উদ্যোগ দিয়ে প্রাইভেট স্কুলের চ্যালেঞ্জকে সাধারণ ভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। কোনও কোনও শিক্ষকের মতে শিক্ষকদের নিজস্ব দুর্বলতাও অভিভাবকদের প্রাইভেট স্কুলের দিকে ঝুঁকে পড়ার অন্যতম কারণ। আবার অভিভাবকদের মধ্যে প্রাইভেট স্কুলের বাহ্যিক চাকচিক্যও প্রাইভেট স্কুলের দিকে ঝুঁকে পড়ার কারণ হিসাবে এক জন শিক্ষক মত দিয়েছেন। যদিও সমস্ত শিক্ষকের বক্তব্য থেকেই এটা বেরিয়ে এসেছে যে এটা এখনও পর্যন্ত মূলত স্বচ্ছল অংশেরই বৈশিষ্ট্য। তাঁদের এই উদ্বেগ খুবই মনোযোগের দাবি রাখে। প্রাইভেট স্কুলে টাকা খরচ তো করতেই হয়। কিন্তু টাকার বদলে ঠিকঠাক শিক্ষা হবে এমন নিশ্চয়তা সব সময় থাকে না। কিন্তু স্বচ্ছলদের দেখাদেখি গরিবদের মধ্যেও প্রাইভেট স্কুলের প্রতি একটা আকর্ষণ বাড়ছে। এটা বেশ বোঝা যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে প্রাইভেট ভাল না খারাপ সেই বিতর্কের চেয়ে জরুরি হল সরকারি স্কুলগুলোতে যে পঠনপাঠন হওয়া উচিত সেটা নিশ্চিত করা। সুখের কথা শিক্ষকদের মধ্যে এই দিকটা জোর পাচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে।
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/30/2020