শিশুদের বিদ্যালয়ে উপস্থিতির প্রশ্নে ৪৪ শতাংশ শিক্ষক মতামত রেখেছেন। এদের মধ্যে সব চেয়ে বেশি সংখ্যক শিক্ষক মিড ডে মিলের কারণে শিশুর উপস্থিতি বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা করেছেন। মোট ৪৯ জন শিক্ষক (৩২ শতাংশ) লিখেছেন যে মিড ডে মিল চালু হওয়ায় বিদ্যালয়ে শিশুর উপস্থিতির হার যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। একটা বড় অংশের শিক্ষক (২৩ জন) নিজ উদ্যোগে উপস্থিতি বৃদ্ধি করা নিয়েও আলোচনা করেছেন। কিন্তু অধিকাংশ শিক্ষকই শিশুর অনুপস্থিতিজনিত সমস্যা ও তার কারণ নিয়ে আলোচনা করেছেন। আমরা ইতিমধ্যেই দেখেছি যে প্রতীচী ট্রাস্টের সমীক্ষায় ২০০১ – ০২-এ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশু উপস্থিতির হার ছিল ৫৮ শতাংশ। কিন্তু ২০০৮ – ০৯ -এ তা দাঁড়িয়েছে ৭৪.৮ শতাংশে। এবং শিশু উপস্থিতির হারে অগ্রগতি নিয়ে কোনও মহলে বিতর্কও নেই। এই অগ্রগতির পিছনে মিড ডে মিলের ভূমিকাও সর্বজন স্বীকৃত। প্রতীচী ট্রাস্টের ২০০৪ এর সমীক্ষায় দেখা যায় পশ্চিমবাংলায় মিড ডে মিল চালু হওয়ার ফলে শিশুদের উপস্থিতির হার বৃদ্ধি পেয়েছিল ১০ শতাংশের বেশি। শিক্ষকদের লেখাতেও মূলত এই সুরই বেরিয়ে এসেছে। বেশ কিছু শিক্ষক এ কথাও লিখেছেন যে শনিবারে উপস্থিত কম হওয়ার কারণ ঐ দিন মিড ডে মিল চালু না থাকা — সারা রাজ্যে শিক্ষকদের সঙ্গে আমাদের যে নিয়মিত আদানপ্রদান হয় সেখান থেকেও স্পষ্ট উঠে আসে। জলপাইগুড়ি জেলার বাসুসুবা বি এফ পি বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুদীপ্ত ইন্দ্র লিখেছেন,
‘আমার বিদ্যালয়টি যে হেতু একটি প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে অবস্থিত ছিল এবং বেশির ভাগ শিশুই প্রায় অত্যন্ত গরিব ঘরের সন্তান, ফলে তাদের বেশির ভাগ দিন হয়ত না খেয়ে বা আধপেটা খেয়ে বিদ্যালয়ে আসতে হত, যার প্রভাব তাদের পড়াশোনার উপরেও পড়ত সরাসরি ভাবে। তারা বিদ্যালয়ে অমনোযোগী ও অনিয়মিত থাকত। ... পরবর্তীতে মিড ডে মিল চালু হওয়ায় এই সমস্যার কিছুটা সমাধান হয়েছে। এর সঙ্গে শনিবার মিড ডে মিল বন্ধ থাকায় সেই দিন ছাত্রছাত্রী সংখ্যা একদম কমে যাচ্ছে। যদি আমি ধরে নিই যে বিদ্যালয়ে সোম থেকে শুক্রবার ১০০ জন ছাত্রছাত্রী হচ্ছে তবে শনিবার দেখা যাচ্ছে ১০ – ২০ জনের বেশি ছাত্রছাত্রী আনতে পারছি না।’
তবে ঐ শিক্ষকের লেখা থেকে জানা যায় যে ছাত্রছাত্রীদের সাংস্কৃতিক কর্মসূচি আয়োজনের মাধ্যমে তাঁরা শনিবারের এই সমস্যার সমাধান করতে চেষ্টা করেছিলেন, যাতে কিছু সুফলও পাচ্ছেন।
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/14/2020