শিশু ও শিক্ষক ছাড়া যেমন একটি বিদ্যালয় সম্পূর্ণ রূপ পায় না ঠিক তেমনি অভিভাবক এবং অন্যান্য মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া একটি বিদ্যালয় লক্ষ্য পূরণে অক্ষম। শিক্ষকদের কথার মাধ্যমে প্রশাসনিক নানা দিক সম্পর্কে অভিযোগ, সেই নিয়ে শিক্ষকদের নানা ক্ষোভপূর্ণ কথা আমাদের সামনে উঠে এসেছে। এই ক্ষোভের সঙ্গত কারণ আছে। কিন্তু একটা সমস্যা মনে হচ্ছে এই যে, শিক্ষকদের এই অভিযোগগুলি বৃহত্তর সামাজিক ক্ষেত্রে তেমন ভাবে যুক্ত হয়ে উঠতে পারছে না। যার ফলে বিদ্যালয় ব্যবস্থা ও শিক্ষা প্রশাসন নিয়ে যে একটা সামাজিক গণ- আন্দোলন গড়ে ওঠা দরকার, সেটা কাম্য মাত্রায় পৌঁছতে পারল না। আমাদের ব্যবস্থায় যে স্তরবিন্যাস বিদ্যমান, সেই বিন্যাস অনুযায়ী শিক্ষকরা যেমন আধিকারিকদের বশ, তেমনি আবার তাঁদের নিজেদের একটা বড় অংশের মধ্যে অভিভাবকদের সঙ্গে সম্পর্কটা পদমর্যাদাগত ছকের মধ্যে দেখার প্রবণতাটি বেশ জোরালো।
এটা তাঁদের সঙ্গে অভিভাবকদের মানসিক দূরত্ব গড়ে দেয়। প্রায় ১৮৭ জন শিক্ষকদের লেখায় অভিভাবক অভিভাবিকাদের কথা আলোচিত হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ১১৬ জনের লেখাতেই একটা অভিযোগের সুর, ‘অভিভাবকরা সচেতন নন, পড়াশোনার গুরুত্ব বুঝতে পারেন না, অভিভাবকদের সভা হলেও সেই সভাতে উপস্থিত হন না।’ দক্ষিণ ২৪ পরগণার এক শিক্ষক লিখেছেন, ‘অনেক সময় অভিভাবক জানেনই না তাঁর শিশু কোন শ্রেণিতে পড়ে, ফলে শিশু-শিক্ষক-অভিভাবক এই যোগাযোগটি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।’
মুর্শিদাবাদ জেলার এক শিক্ষিকার কথায়, ‘ভাবতেও অবাক লাগে এমন কিছু মা এখনও আছেন যাঁরা এখনও তাঁদের সদ্য দুই-তিন বছরের শিশুর জন্মের প্রমাণপত্রও সুরক্ষিত করে রাখার কথা ভাবেন না। যে শিশুকে দেখে বোঝা যায় যে সে পাঁচ বছরের বেশি বয়সের হয়ে গেছে তাদেরও বিদ্যালয়ে পাঠানোর তাগিদ অনুভব করেন না।’
সন্তানদের জন্মের প্রমাণপত্র গুরুত্ব অজানা থাকাটা একটা বড় সমস্যা ঠিকই। এগিয়ে থাকা অংশ হিসাবে শিক্ষকদের কিন্তু এটা অজানা থাকার কথা নয়, যে এই মা নিজের লেখাপড়ার সুযোগই পাননি।
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/25/2020