জলপাইগুড়ি জেলার উত্তর পররপাড় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আদিত্যরঞ্জন অধিকারীও তাঁর কথায় জানিয়েছেন যে, ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকরা তাঁকেই বেশি করে চাইছেন এবং তাঁরা চান তিনি যেন সব ক্লাসই করেন। কোনও কোনও শিক্ষক তাঁদের কথায় এও বলেছেন যে, গ্রামে যে সব অনুষ্ঠান হয় তার প্রত্যেকটিতে তাঁদের অংশগ্রহণ করতে হয়। গ্রামবাসীরা শিক্ষকদের ভালোবাসেন, তাঁরা চান শিক্ষকরা গ্রামের সব অনুষ্ঠানে হাজির থাকুন। এই ব্যাপারটার আবার একটা অন্য দিক আছে। কোনও কোনও শিক্ষক বলেছেন যে উৎসব অনুষ্ঠানগুলিতে যে টাকা ধার্য করা হয় তাও তাঁদের দিতে হয়। আর তা না দিলে শিক্ষকদের সহ্য করতে হয় নানান অপমান।
পরিস্থিতিটা অদ্ভুত মনে হতে পারে। এক দিকে যখন কোনও কোনও শিক্ষক বলছেন যে তাঁদের সাথে গ্রামের মানুষ সহযোগিতা করছেন, তাঁদের ভালোবাসছেন, তাঁদের কাছে নানা আব্দার নিয়ে আসছেন, ছেলেমেয়েদের ভালোমন্দ শিক্ষকদের উপর ছেড়ে দিচ্ছেন, তখন অপর দিকে অনেক শিক্ষকই ঠিক এর বিপরীত কথা বলছেন, অপমানিত হওয়ার কথা বলছেন। হয়ত এমনটা হতে পারে যে, যে সব শিক্ষক সমস্যার কথা বলছেন তাঁদের পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিই আদৌ সুসম্পর্কের অনুকূল নয়। অনেকে বলেছেন আগে তাঁরা অনেক বেশি সম্মান পেতেন, কিন্তু এখন অপমানিত হন বেশি।
কিন্তু প্রশ্ন হল, এ রকম অবস্থা কেন? কেন আগে যাঁরা শ্রদ্ধা, ভালোবাসা পেতেন তাঁরা আজ অপমানিত হচ্ছেন বলে মনে করছেন? কেন এ রকম ঘটছে ? কোথা থেকে জন্ম নিয়েছে এই হতাশা ও বেদনাবোধ?
আমরা আগেই উল্লেখ করেছি যে, আমাদের সমাজের বিন্যাসটি যে রকম বহুস্তরীয় তাতে বিভিন্ন সামাজিক ধাপের মধ্যে এমন একটা সম্পর্ক তৈরি হয় যাতে একটি ধাপকে অন্যটির অধীনস্থ মনে করা হয়। এই মনোভাবেই নীতি নির্ধারণে শিক্ষকদের কোনও ভূমিকা থাকে না। কী ভাবে কমিটিগুলি গড়া উচিত, তার পরিচালনা কেমন হওয়া উচিত তা নিয়ে তাঁদের মতামত বড় একটা গ্রাহ্য হয় না। দৈনন্দিন কার্যপরিচালনায় শিক্ষকদের ভূমিকাটি যেখানে কেন্দ্রীয় সেখানে তাঁদের অভিজ্ঞতাগুলির মূল্যায়ন হতে পারত।
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 12/25/2019