নিজেদের পোস্টিং নিয়েও শিক্ষকদের প্রচুর অভিযোগ। মালদা জেলার হরিশচন্দ্রপুর জুনিয়র বেসিক স্কুলের ৩৪ বছর বয়স্ক শিক্ষক অনির্বাণ ভট্টাচার্য লিখেছেন যে তাঁর প্রথম নিয়োগ হয়েছিল যে বিদ্যালয়ে, সেখানে যাওয়ার জন্য তাঁকে বাসে ৩৮ কিমি যাওয়ার পর আরও ৪ কিমি মাটির রাস্তায় হেঁটে যেতে হত, যা বর্ষাকালে হাঁটার অবস্থাতে থাকত না। পরে ২০০৭ সালে যখন বর্তমান বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ গ্রহণ করেন, তখনও তাঁর এই দূরত্বের সমস্যাটি থেকে যায়। এই স্কুলটিও তাঁর বাড়ি থেকে ৪৪ কিমি দূরে অবস্থিত। জলপাইগুড়ি জেলার রাজকুমার সাহা-র লেখা থেকে জানতে পারা যায় যে তাঁকে ৫৫ কিমি দূরত্বের এক বিদ্যালয়ে পাহাড়ি নদী পার করে যেতে হয় (যে নদী আবার বর্ষাকালে প্রবল স্রোতস্বিনী হয়ে ওঠে)। অর্থাৎ দূরত্ব ও যাতায়াতের সুব্যবস্থার সমস্যা অনেক শিক্ষকের ক্ষেত্রেই তাঁদের কর্মোদ্যম কমিয়ে দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে সমস্যাটির সমাধান হতে পারে শিক্ষকদের নিজ নিজ বিদ্যালয়ের কাছাকাছি বাসস্থান নেওয়া। কিন্তু শিক্ষক বহালের ক্ষেত্রে যে প্রশাসনিক অব্যবস্থা তৈরি হয়ে আছে তার ফলে শিক্ষকদের মধ্যেও এমন একটা ভাবনা বোধহয় কাজ করছে যে ‘প্রত্যেকেরই বাড়ির কাছে পোস্টিং হইয়া উচিত’, একটি অংশ যদি এই সুবিধা পেয়ে থাকেন, তা হলে অন্য অংশ পাবে না কেন? এর একমাত্র সমাধান হল, শিক্ষকদের পোস্টিং, বদলি, ইত্যাদি ক্ষেত্রে একটি যুক্তিসঙ্গত পদ্ধতি মেনে চলা, যাতে শিক্ষকের পোস্টিং-এর ক্ষেত্রে প্রধান বিবেচ্য হবে কোথায় কত শিক্ষক দরকার তার উপর।
শিক্ষা–প্রশাসনের এই ত্রুটিগুলি ছাড়া আরও কিছু বিষয়ে শিক্ষকরা দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। যার মধ্যে পরে পাঠ্যবই সরবরাহ, মিড–ডে মিলের টাকাপয়সা ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনা, পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যসূচি ইত্যাদি।
কিন্তু শিক্ষা প্রশাসনের একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার — মানুষের অংশ গ্রহণ — নিয়ে যে সামাজিক স্তরে ব্যাপক আলোচনার অভাব আছে, সেটা আমরা পরবর্তী অধ্যায়ে দেখব।
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 3/1/2019