শিক্ষকদের শিক্ষাদান পদ্ধতি এবং বাড়িতে শিক্ষাদান পদ্ধতির মধ্যে পার্থক্য থাকার ফলে সব থেকে বেশি সমস্যায় পড়ে এই শিশুগুলিই। মানসিক দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয় তাদের মধ্যে। এটি একটি বাস্তবিক সমস্যা যার সাথে শিক্ষকেরা প্রতি দিন মোকাবিলা করে চলেছেন।
মানসিক দ্বন্দ্ব আরও খানিকটা বাড়িয়ে দেয় গৃহশিক্ষকের গতানুগতিক প্রশিক্ষণ পদ্ধতি। শিক্ষকদের মধ্যে যাঁরা শিশুদের গৃহশিক্ষকতা প্রসঙ্গে মতামত দিয়েছেন তাঁরা বলেছেন যে অভিভাবকদের মধ্যে যাঁরা শিশুদের পড়াশোনা নিয়ে একটু সচেতন কিন্তু নিজেদের শিশুর জন্য সময় দেওয়ার অবকাশ নেই, তাঁরা চেষ্টা করেন গৃহশিক্ষক নিযুক্ত করতে। অভিভাবকদের চিন্তাভাবনা থেকে হয়ত এটা তাঁরা শিশুদের উন্নতির জন্যই করেন, কিন্তু সমস্যায় পড়তে হয় এই শিক্ষক ও সর্বোপরি শিশুগুলিকে। বেশির ভাগ গৃহশিক্ষকই পুরনো নিয়ম অনুসারে বাচ্চাদের শিক্ষা দেন যা বর্তমানে বিদ্যালয়ে নতুন পদ্ধতিগুলি থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। ফলস্বরূপ শিশুগুলিকে প্রভূত সমস্যায় পড়তে হয়। বিদ্যালয়গুলিতে যেখানে শিশুকে বাড়ির কাজ হিসাবে কোনও কাজই দেওয়া হয় না সেখানে গৃহশিক্ষকের দেওয়া পড়া মুখস্থ করতে গিয়ে শিশুদের মধ্যে কিছু কিছু বিষয় সম্পর্কে ভীতি তৈরি হয়। যেমন বারুইপুরের প্রদ্যোত কুমার ঘোষ বলেছেন :
‘বিদ্যালয়ের যে কাজ শিশু শেখে তার পুরোটাই রপ্ত করে দেওয়া সম্ভব হয় না। শিক্ষক শিক্ষিকার আপ্রাণ চেষ্টার পরেও কিছু পাঠ রপ্ত হতে বাকি থাকে। তখন প্রয়োজন শিশুকে অতি যত্নে বাবা মায়ের সেই পাঠ রপ্ত করানো। কিন্তু শিশু তখন একদল ছাত্রের সাথে যায় গৃহশিক্ষকের কাছে। শিশুর তখন সমস্যা সে বিদ্যালয়ে তার প্রিয় শিক্ষক শিক্ষিকার কাছে শিখে আসা পাঠ রপ্ত করবে না গৃহশিক্ষকের পাঠ প্রস্তুত করবে। প্রথম বিদ্যালয়ে আসা শিশুর তার পঠন পাঠনে যে আনন্দ পাওয়ার কথা তা থেকে সে বঞ্চিত হয়। সে কিছুটা আগ্রহ হারায়।’
তা ছাড়া বিদ্যালয়ের বিদ্যাচর্চা এবং গৃহশিক্ষকের বিদ্যাচর্চার মধ্যে যে বিশাল পার্থক্য সৃষ্টি হয়, তা মেটানো সম্ভব হয় না। ফলস্বরূপ যে ভাবনাচিন্তা থেকে শিক্ষকেরা শিশুদের নতুন পদ্ধতিতে পাঠদান করার চেষ্টা করে থাকেন, তা প্রায় অসফলই থেকে যায়।
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 5/5/2020