শিক্ষকদের আলোচনাগুলিতে দেখা যাচ্ছে যে বিদ্যালয়গুলিতে মধ্যাহ্নকালীন ভোজন চালু হওয়ায় উপস্থিতির হার বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকী এও দেখা গেছে বাবা–মায়েরা তাঁদের শিশু উপযুক্ত বয়সে পৌঁছনোর পূর্বেই তাদের বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দিচ্ছেন। এবং কিছু ক্ষেত্রে শিশু ভর্তি বা শিশু উপস্থিত বৃদ্ধির হারে ক্ষুন্নিবৃত্তির একটা ব্যাপারও আছে। এ রকম অবস্থায় শিক্ষাদান করা বা নিয়মিত বিদ্যাচর্চার মধ্যে রাখা একটি বড় দায়িত্ব যা, নিরন্তর এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা করে চলেছেন। এর একটা বড় অঙ্গ হল পঠনপাঠনের প্রক্রিয়া। শিক্ষকভেদে এই প্রক্রিয়ার পার্থক্য দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ প্রথাগত নিয়মের বাইরে বেরিয়ে গিয়ে নতুন নতুন পদ্ধতিতে খেলাচ্ছলে শিশুদের পড়ানোর চেষ্টা করে চলেছেন। আবার কারও কারও লেখা থেকে পাওয়া যাচ্ছে প্রথার অনুসরণে অটল থাকার এক ঝোঁক। কর্মশালাগুলিতে শিক্ষকদের লেখাগুলিতে ৭১ জন শিক্ষক শিক্ষণ শিখন পদ্ধতি নিয়ে কোনও না কোনও আলোচনা করেছেন। এঁদের মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ শিক্ষক মনে করছেন যে, নতুন পদ্ধতিতে শিক্ষাদান করার ফলে ছাত্ররা অনেক বেশি মনোযোগী হয়েছে। অনেক দ্রুত তারা নতুন বিষয়গুলিকে ধরতে পারছে। এবং তাঁরা এ কথাও বলেছেন যে পুরনো পদ্ধতির তুলনায় নতুন পদ্ধতি অনেক বেশি আনন্দদায়ক এবং গ্রহণযোগ্য। অনেক শিক্ষক তাঁদের লেখায় এ কথাও বলেছেন যে, নতুন পদ্ধতিতে শিক্ষাদানের ফলে শিশুর মানসিক বিকাশ অতি দ্রুত ঘটছে। প্রসঙ্গ ক্রমে বারুইপুরের রাজপুর পদ্মমণি প্রাথমিক বালিকা বিদ্যালয়ের রত্না ভট্টাচার্য্যের উল্লেখ করতেই হয়। তিনি বলেছেন যে, মাঝে মাঝেই তিনি শিশুদের কিছু বানিয়ে লিখতে দিতেন। তাঁর কথা অনুযায়ী :
‘চতুর্থ শ্রেণিতে এক দিন দিলাম — ‘গাছে গাছে ফুল ফুটেছে’ আর ‘হলুদ পাখি হলুদ পাখি’। ওরা এই দু’টি লাইনের সাথে মিলিয়ে আর একটি লাইন লিখল ‘গাছে গাছে ফুল ফুটেছে। মৌমাছিরা ঐ ছুটেছে।’ কেউ লিখল ‘হলুদ পাখি, হলুদ পাখি, আমার কাছে আসবে নাকি?’ আমি খুব অবাক হয়ে দেখলাম যে দরিদ্র পরিবারের শিশুটি ভালো করে কথাই বলে না, সে লিখে এনেছে, ‘গাছে গাছে ফুল ফুটেছে, শিউলি ফুলে গাছ ভরেছে।’ আমার চোখে জল এসে গেল। ভাবলাম ওকে তো এত দিন ‘কিছু পারবে নার দলে’ রেখেছিলাম। এই সব অভিজ্ঞতা এই সব প্রাপ্তি আমার শিক্ষক জীবনের সম্পদ।’
অন্যান্য জেলার অভিজ্ঞতা লিখন কর্মশালাগুলি থেকে প্রমাণ, রত্না ভট্টাচার্য্যের অভিজ্ঞতা আরও অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকার হয়েছে। প্রথাগত উপায়ে আগে যখন শিক্ষা দেওয়া হত স্বাভাবিক ভাবেই শ্রেণির দুর্বল ছাত্রছাত্রীদের বিশেষ কিছু বিষয়ে ভীতি চলে আসত। শিক্ষকদের লেখা অনুযায়ী নতুন পদ্ধতি অনেক বেশি বিজ্ঞানসম্মত।
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/29/2020