বেশ কয়েক জন শিক্ষক লিখছেন যে তাঁরা চেষ্টা করেন বিদ্যালয়ে শিশুকে সবটুকু পঠন এবং অনুশীলনের মাধ্যমে শেষ করিয়ে দিতে। এ প্রসঙ্গে বহরমপুরের অপর্ণা ব্যানার্জির কথা উল্লেখ করতে হয়। তিনি লিখছেন :
‘আমি আমার বিদ্যালয়ের কথা বলব, যারা আসে তারা বেশির ভাগই আসে সেই পরিবার থেকে যারা দু’ বেলা অন্নসংস্থানের জন্য প্রাণপাত করে। তাই তাদের অভিভাবকদের যদি বলি যে বাড়িতে দেখবেন সেটা কখনওই তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। তাই আমার চেষ্টা থাকে খুব সহজ ভাবে বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে বিষয়টি তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলার। এবং গল্পচ্ছ্বলে বা আলোচনার মাধ্যমে বিষয়বস্তুটা যাতে শ্রেণিতেই তাদের মনস্থ হয়ে যায় সে দিকে লক্ষ রাখি। অর্থাৎ বাড়ির পড়ার কাজ যথাসম্ভব শ্রেণিতেই সম্পন্ন করি।’
এ ধরনের ইতিবাচক মানসিকতা আমরা বেশ কিছু শিক্ষকের লেখাতেই পেয়েছি যাঁরা শিশুর বাড়ির পরিস্থিতি মাথায় রেখে পাঠদান কাজ অনেকটাই শ্রেণিতেই সম্পন্ন করে ফেলেন। অবশ্যই যা শিশুর পক্ষে ভীষণ সহায়তার কাজ করে। কিন্তু, এটাও মাথায় রাখতে হবে যে, শুধু শিক্ষকের শুভেচ্ছা ও একক প্রচেষ্টা দিয়ে এ সমস্যাটা দূর করা যাবে না। তাঁদের কর্মোদ্যোগ অবশ্যই একটা কেন্দ্রীয় ভূমিকা রাখে, কিন্তু তাঁরা যাতে সুষ্ঠু ভাবে বিদ্যালয় পরিচালনার কাজটা চালিয়ে যেতে পারেন, সরকারি ব্যবস্থাপনাকে সে দিকে নজর দিতে হবে। সেই সঙ্গে বাড়িতে পড়ার উপর যে জোর — সমাজে শক্তিশালী এই মানসিকতার বিরুদ্ধে শুধু শিক্ষকদেরই সচেতন হলে চলবে না, অন্যদেরকেও এ ব্যাপারে নিজেদের ভাবধারায় পরিবর্তন আনতে হবে। বস্তুত, স্কুলের পড়া স্কুলে শেষ হলে শিশু যে দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাস অর্জন করে তা তাকে বাড়িতে অন্য বই পড়তে প্রণোদিত করে। বাড়িতে সে কিছুই পড়বে না এমন নয়, কিন্তু বাড়িতে স্কুলের পড়া না পড়ে সে যদি নিজের মতো করে বেছে নিতে পারে তা হলে সেটা হবে একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/20/2020