বর্তমানে আমি যে স্কুলের ঠিকানা দিলাম সেখানে কাজ করছি। এখানেও এসে আমি শিশুদের অনুপস্থিতি বেশি দেখছি। এবং তার ফলে শিশুদের শিক্ষায় পিছিয়ে পড়তে পড়তে স্কুল ছেড়ে দেওয়ার কথা শোনা গেছে। আমাদের এলাকায় বর্তমানে সর্ব শিক্ষা মিশন বা বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণের ফলে অনেকটাই সমস্যা দূর হওয়ায় শিশুরা স্কুলমুখী হচ্ছে। কিন্তু আর একটি কথা হল শিশুরা বাড়ির যে পরিবেশ থেকে স্কুলে আসে, স্কুলের নিয়মকানুন রপ্ত করানো বা অভ্যেসের রূপান্তরকরণ অত্যন্ত কঠিন।
বিদ্যালয়ে শিশুরা দলবদ্ধ ভাবে কাজ করতে খুবই আগ্রহী। বিদ্যালয়ের আঙিনায় বিভিন্ন কাজ যেমন বাগান তৈরি, মাটির জিনিসপত্র তৈরি, বিভিন্ন সৃজনাত্মক, উৎপাদনাত্মক কাজ করে যা কিন্তু পাঠ্যপুস্তকের ক্ষেত্রে লক্ষ করা যায় না। খেলাধূলাতে রীতিমতো মান অভিমান সহ অংশগ্রহণ, স্বতঃস্ফূর্ততাও দেখা যায়। আগের স্কুলের বাস্তব কর্মকাণ্ডের উপর নির্ভর করে বর্তমান বিদ্যালয়ে এক বছর থেকে সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে কিছুটা সাফল্য এখনও পাওয়া যাচ্ছে। শিশুদের সঙ্গে শিক্ষকের দূরত্ব কমিয়ে কাছে টানার মন্ত্র একটি, সেটি হল শিশুদের নিকট পৌঁছনো। তাদের সঙ্গে আত্মিকভাবে মিশেও যাওয়ার মন্ত্র আজও কাজে লাগে। শিশুদের ভালবাসতে পারলেই তারা শ্রদ্ধা করে, এটাই আমার উপলব্ধি। শিশুমন জয় করতে পারলে সেই শিশু তখন থেকে শিক্ষকের কাছ থেকে সব কিছু শিখতে শুরু করে। অনেকে ঘটনার মধ্যে একটি ঘটনা উল্লেখ করি :
এক দিন স্কুল ছুটি হয়ে গেছে। আমিও বাড়ি যাব মনে করে রাস্তার দিকে এগোতে থাকি। দেখি একটি ছেলে আমার পিছন পিছন আসছে। আমি যে দিকে যাব তার উল্টো দিকে তার বাড়ি। আমি বললাম, কোথায় যাবে? ছেলেটি বলল, কোথাও না। তুমি বাড়ি যাবে না? ছেলেটি বলল, যাব স্যার। আপনি কাল আসবেন তো স্যার? আমি বললাম কেন, আসব তো! না, কিছু না। আমি লক্ষ করলাম সেই সময় ঐ ছেলেটির চোখ ছলছল করছে। বুঝতে পেরেছিলাম তার সে দিনের অনুভূতি।
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/14/2019