চার বছর একটি ক্লাস নিয়ে শ্রেণি পরিচালনার অভিজ্ঞতার মধ্যে একটা জিনিস দেখতে পেয়েছি। শিশু কী চায় তার বিচার শিক্ষক মহাশয়কে করতে হবে। এবং পড়াশোনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে তাদের এই কচকচানি হয়ত পছন্দ হবে না। তাই মাঝে মাঝে তাদের উৎসাহিত করার জন্য ধাঁ ধাঁ (গ্রাম বাংলায় বলে ‘ফটকি’) ইত্যাদি শোনাতাম। এ ছাড়া প্রতি পর্বের মূল্যায়নের যে পদ্ধতি ছিল তার প্রতি আলোকপাত করি। বোর্ডে প্রশ্ন লিখে দেবেন শিক্ষক মহাশয়, আর উত্তর পাতায় লিখবে শিশুরা — এটা দুর্বল বা অল্প সামর্থ্যযুক্ত শিশুদের পক্ষে আমার মনে হয় খুবই কঠিন কাজ। তার জন্য তারা তখন বোর্ডে যা লেখা থাকত তাই খাতায় লিখত, উত্তর আর লিখত না। আমি বহির্মূল্যায়নের মতো প্রশ্নপত্র একটা কাগজে লিখে কম পয়সায় জেরক্স করে অভ্যাস করানোর ফলে শিশুদের ভাল উন্নতি লক্ষ করি। বর্তমানে সেই পদ্ধতি চালু হওয়ার জন্য বিভাগীয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ। কারণ শিশুদের মনস্তাত্ত্বিক দিক হয়ত এটাই বলবে যে শিশুরা যে পদ্ধতি শিখবে তার মূল্যায়নে (বিশেষত প্রথম শ্রেণি) সেই ভাবে তার প্রকাশ ঘটাবে।
শিশুরা যদি পারে তবে তার বিদ্যালয়ে উপস্থিতির ক্ষেত্রে কোনও ঘাটতি থাকে না। মায়ের বা পরিবারের কারও কথা তখন শোনেনি, বিদ্যালয়ে আসার জন্য নিষেধ করা সত্ত্বেও। তবে এটা বলে রাখা প্রয়োজন মনে করি এটা নির্ভর করবে শিক্ষকের উপর, সিলেবাস বা পঠনপাঠন বিষয়ক বিভিন্ন সামগ্রী ব্যবহারের উপর। শিশুদের পঠনপাঠনের সব চেয়ে কার্যকর উপায় হল অনুশীলন। অনুশীলনের জায়গাটা বেশি বেশি করাতে পারলে তারা পারদর্শী হয়ে উঠে। প্রথম শ্রেণির লিখনের ক্ষেত্রে এই জায়গায় অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তবে আমি যেখানে কাজ করতাম সেখানে শ্লেট বা পেনসিল কিনে দেওয়ার ক্ষমতা অনেক পরিবারের ছিল না। স্কুল থেকেই তার ব্যবস্থা হল। ‘সমন্বিত শিখন উন্নয়ন কর্মসূচী’র একটা সফলতা পাওয়া গিয়েছিল বিভিন্ন সম্ভার ব্যবহারের মধ্য দিয়ে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুদের খেলনাসামগ্রীর একটা গুরুত্ব আছে। তবে যাই হোক শিশুদের পঠনপাঠনের ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা হচ্ছে শিক্ষক ও অভিভাবকের ঘন ঘন সাক্ষাৎ ও আলোচনার । যে আলোচনা হবে একমাত্র তাঁর সন্তানকে নিয়ে।
সূত্র : কলমচারি, প্রতীচী ইনস্টিটিউট, ফেব্রুয়ারি ২০১২
সর্বশেষ সংশোধন করা : 5/1/2020