শিয়রে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। এ বার আমূল বদলাচ্ছে নম্বর বিভাজন পদ্ধতি। পরিবর্তন আসছে প্রশ্নপত্রেও। সব বিষয়েই এ বছর দু’টি পৃথক প্রশ্নপত্র দেওয়া হবে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের। এমসিকিউ এবং যে সব সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের ভিত্তিতে এক নম্বরের উত্তর দিতে হবে, সেগুলি মিলিয়ে একটি বুকলেট তৈরি করা হবে। উত্তর লেখার শেষে সেটি পরীক্ষা কেন্দ্রেই জমা দিতে হবে। তা নিয়েই সংশয় তৈরি হয়েছে। কারণ একেকটি বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বুকলেটে (বি) বরাদ্দ নম্বর ভিন্ন। পাশাপাশি বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও পরীক্ষকদের সঙ্গে বৈঠকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের তরফে দাবি করা হয়েছে, অধিকাংশ বিষয়েই ৫০ শতাংশ এমসিকিউ প্রশ্ন থাকবে। আর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নভিত্তিক উত্তরের ক্ষেত্রে এক নম্বরের বেশি ও রচনাধর্মী প্রশ্নের বুকলেটটি (এ) বাড়ি নিয়ে যাওয়া যাবে। প্রশ্ন নিয়ে এই বিভ্রান্তির মাঝেই উচ্চ মাধ্যমিকে এ বছর আশার কথা, ল্যাব-নির্ভর বিষয়ে প্র্যাকটিক্যালের পাশাপাশি নন-ল্যাব সব বিষয়েও প্রজেক্ট ওয়ার্ক। অর্থাৎ, পরীক্ষার্থীরা কলা ও বাণিজ্য শাখায় আগাম ১০০ নম্বরের চাপ কমিয়েই পরীক্ষায় বসতে চলেছে। বিজ্ঞান বিভাগে যা ১৩০ নম্বর (গণিত থাকলে ১২০)। যদিও প্রজেক্ট ওয়ার্ক নিয়ে খামতি ও ভুল বোঝাবুঝি নিয়েও শিক্ষা মহলে প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ, কিছু না করেই অনেকের ২০ -২৫ শতাংশ নম্বর পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এক সময় ভিন বোর্ডের পড়ুয়ারা রাজ্যের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে এলে তাদের প্রাপ্ত নম্বর থেকে ১০ শতাংশ বাদ দেওয়া হত। এ বার তড়িঘড়ি প্রজেক্ট ওয়ার্ক চালু করতে গিয়ে এ রাজ্যের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের যা হাল, তাতে ভিন রাজ্যের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে গেলে এই রাজ্যের পড়ুয়াদের একই হাল হতে পারে।
পরিকাঠামোগত ঘাটতির ফলে প্রায় আট লক্ষ উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর ৪০ লক্ষের বেশি প্রজেক্ট ওয়ার্কের খাতা স্কুলের তরফে সংসদের কাছে জমা দিতে গেলে, তা যথাযথ ভাবে মিলিয়ে দেখা হচ্ছে না। এমনকী স্কুলে বিষয়ভিত্তিক পড়ুয়ার সংখ্যা না গুনেই জমা নেওয়া হচ্ছে উত্তরপত্র। সেগুলি এক জায়গায় ডাঁই করে রাখা হচ্ছে। যদিও সংসদ সচিব সুব্রত ঘোষ এ সবে খুব একটা আমল দিতে চান না। তিনি বলেন, ‘ওয়েবসাইটে সব বিষয়ে প্রশ্নপত্রের ধরন ও নম্বর বিভাজন নিয়ে বিশদে তথ্য দেওয়া হয়েছে। আর প্রজেক্ট ওয়ার্ক নিয়ে ইতিমধ্যে এক দফায় কাজ হয়ে গিয়েছে। সময় অনুযায়ী, পরবর্তী দফায় কাজকর্ম হবে। ধারণা থেকেই অনেকে নানা মন্তব্য করছেন।’ হিন্দু স্কুলের সহকারি প্রধান শিক্ষক নারায়ণ দাসের কথায়, ‘যে ভাবে প্রজেক্ট ওয়ার্কের খাতা জমা নেওয়া হচ্ছে, তা মোটেই স্বচ্ছ নয়। কোনও স্কুলে কতজন পড়ুয়া ও কতগুলি প্রজেক্ট খাতা তা মিলিয়ে দেখা হচ্ছে না। একটা জায়গায় ডাঁই করে জমা রাখা হচ্ছে। ফলে যে প্রজেক্টে ভালো কাজ করল আর যে করল না, তাদের একই নম্বর দিলে অবিচার হবে। সংসদ আরও গঠনমূলক ভাবে এই কাজ করলে ভালো হত।’ সেন্ট লরেন্স হাইস্কুলের গণিতের শিক্ষক সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য বলেন, ‘ল্যাব বেসড পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, পরিসংখ্যান ও জীববিদ্যা বিষয়ে বুকলেটে (বি) ১৮ নম্বরের প্রশ্ন থাকবে। গণিতে আরও কম, ১০ নম্বর থাকবে। কিন্তু সংসদের তরফে দু-একজনের বিবৃতিতে এ নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে।’ সুব্রতবাবু জানান, ইতিহাস, ভূগোল এবং এডুকেশন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজতত্ত্ব এবং দর্শনের মতো বিষয়ে এমসিকিউ পদ্ধতিতে ৫০ শতাংশ নম্বর থাকবে। তবে কোর বিষয়গুলিতে আবার এমসিকিউ পদ্ধতিতে কম নম্বর থাকছে। রায়গঞ্জ করোনেশন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক শুভেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘প্রজেক্ট ওয়ার্ক এ বারই প্রথম শুরু হয়েছে। প্রথম বছরে কিছু ভুল বোঝাবুঝি ও খামতি থাকাই স্বাভাবিক। তবে অন্য বোর্ডগুলি এই পদ্ধতি আগেই শুরু করেছিল। সে ক্ষেত্রে চলতি কাঠামোয় কাউন্সিলের সেই পদ্ধতি একই ভাবে চালু করায় কিছু অসুবিধা হতেই পারে।’
সূত্র: এই সময়, ৭ মার্চ, ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/15/2020