গণিতশিক্ষার উদ্দেশ্যগুলি নিম্নরূপ ---
গণিত একশো শতাংশ যুক্তিনির্ভর। যুক্তির পিঠে যুক্তি সাজিয়ে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে হয়। গণিতচর্চার সেই লক্ষ্য থেকে সরে আসলে গণিতের প্রতি ক্রমশ অনীহা আসবেই। বিদ্যালয়ে যে গণিতচর্চা চলছে তার আমূল পরিবর্তন না করলে গণিতভীতি বাড়তেই থাকবে। আর খোঁজ চলবে গাণিতিক যুক্তি ব্যতিরেকে সহজ উপায়ে কী ভাবে ভালো নম্বর পাওয়া যায়। এমন অভিভাবক আছেন যাঁরা, গণিতে শিক্ষার্থীর শুধুই বেশি নম্বর চান। শিক্ষার্থী কতটুকু গণিত বুঝছে, কতটুকু গণিত চিন্তা করতে শিখছে সে দিকে কোনও মাথাব্যাথা নেই। আসল সত্য হল, সঠিক পথে গবেষণামূলক মনন তৈরির লক্ষ্যে গণিতচর্চা করা হলে গণিতে পিছিয়ে পড়া বা মাঝারি মানের শিক্ষার্থীরাও এগিয়ে আসবে। মনে রাখতে হবে গণিতে বেশি নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীরা নয়, গণিতের প্রতি অনুরাগী শিক্ষার্থীরাই গণিতে শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা পায়। উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক গণিত প্রতিযোগিতা অঙ্ক অলিম্পিকে ২০০৯ ও ২০১০-এর রৌপপদক এবং ২০১১-তে স্বর্ণপদকজয়ী ভারতের প্রতিযোগী আকাশনীল দত্ত কোনও দিনই অঙ্কে ১০০-তে ১০০ পায়নি। এমনকী গণিতে সব সময় ভালো নম্বরও পায়নি। ২০১১-তে ব্যারাকপুর গভর্নমেন্ট স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে, বর্তমানে সে আমেরিকার এমআইটি-র ছাত্র। এ প্রসঙ্গে আরও দু’জনের কথা উল্লেখ করব। এক জন দক্ষিণ দিনাজপুরের দৌলতপুর গ্রামের বাসিন্দা বাসুদেব তিওয়ারি। পঞ্চম শ্রেণির অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় অঙ্কে ফেল করেছিল। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় গণিতের প্রতি ভালো বাসা শুরু। জয়েন্টে ৮৭১ র্যাঙ্ক করেও বাবা-মায়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কলকাতার জয়পুরিয়া কলেজে ভর্তি হয় বিএসসি-তে গণিতে অনার্স নিয়ে। তাতে কী ! বিএসসি সিলেবাসের পড়া শিকেয় তুলে রাতের পর রাত জেগে আবিষ্কার করে গণিতের নতুন কিছু সূত্র। প্রকাশিত হয় আধুনিক গণিত অন্বেষায় (চতুর্থ বর্ষ, প্রথম সংখ্যা, আগস্ট-অক্টোবর ২০০০)। এর ফল পেতে হবে বৈকি ! পেয়েছেও হাতেনাতে। বিএসসি-এর ফাইনালে গণিতে পেয়েছে পঁয়তাল্লিশ শতাংশ নম্বর। আর দ্বিতীয় জন ফ্রান্সের গণিতবিদ আঁরি পঁওইকার। ছাত্রজীবনে গণিতের অনেক সূত্র আবিষ্কার করেছিলেন। ডিগ্রি ক্লাসে পড়ার সময় আরও উঁচু ক্লাসের অঙ্ক মুখে মুখে করে দিতেন। এ হেন গণিতের বাঘ ডিগ্রি ক্লাসে অঙ্কে ফেলের চোয়ালে পৌঁছে যেতে গিয়ে বেঁচে গেলেন।
সূত্র : আধুনিক গণিত অন্বেষা, গণিতভীতি সংখ্যা, ২০১২।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/3/2020