উত্তর কলকাতার রামবাগানের দত্ত পরিবারে ১৮৫৬ সালের ৪ মার্চ তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পরিবার খ্রিস্ট ধর্মে দীক্ষিত ছিল। ১৮৬৯ সালে দিদি অরু দত্তের সঙ্গে ফ্রান্স, ইটালি ও ইংল্যান্ড ভ্রমণে যান তিনি। তরু দত্তের পিতা মেয়েদের সুশিক্ষা, উন্নত রুচি ও মানস গঠনের জন্য দুই মেয়েকে ইউরোপে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁদের ভর্তি করে দেওয়া হয়েছিল দক্ষিণ ফ্রান্সের একটি আবাসিক স্কুলে। এখানেই তরুর ফরাসি ভাষা শিক্ষার সূচনা। তিনি যে শুধু ফরাসি ভাষা শিক্ষা করেছিলেন তা নয়, তাঁর স্বল্প জীবনে তিনি ফরাসি সৌজন্য, শিষ্টাচার এবং আভিজাত্য অনুসরণ করেছিলেন। তাই তাঁর সম্পর্কে বলা হয়, “তরু দত্তের রক্ত ছিল বাংলা, মন ইংরেজি আর অন্তর ফ্রেঞ্চ।”
১৮৭১ সাল থেকে ১৮৭৩ সাল পর্যন্ত তিনি কেমব্রিজে কাটান এবং সেই সময়ে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে হায়ার লেকচারস ফর উইমেন-এ যোগদান করেন। সিডনি সাসেক্স কলেজের রেভারেন্ড জন মারটিনের কন্যা মেরি মারটিনের সঙ্গে এই সময়ে তরু দত্তের পরিচয় হয়। এবং ওঁদের ভিতর প্রগাঢ় বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। দেশে ফিরে আসার পরেও ওঁরা চিঠির আদানপ্রদান চালিয়ে যান। ইংল্যান্ড থেকে আত্মীয়দের লেখা তরু দত্তের চিঠিগুলি ওঁর চিঠির সংকলনে স্থান পেয়েছে। ১৮৭৩ সালে তিনি যখন কলকাতায় ফিরে এলেন তখন তাঁর পিতার অনুপ্রেরণায় ফ্রান্স থেকে বই আনিয়ে পড়াশোনা করতেন। এই সময় তিনি ফরাসি ভাষার দেড়শো কবিতা ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। সেই কবিতা সংকলনের নাম হয় ‘A sheat gleaned in French field’। ১৮৭৬ সালে তা প্রকাশিত হয়। এর পরের বছরেই ১৮৭৭ সালের ৩০ আগস্ট মাত্র ২১ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু হয়।
তরু দত্তের মৌলিক কবিতাও আছে। তাঁর মৌলিক কবিতাগুলো ছোট ছোট কিন্তু মানুষের জীবনের নানা সমস্যার কথা আছে এই সব কবিতায়। মেয়েদের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তিতে বিশ্বাসী তরু পৌরাণিক ভারতের সাবিত্রীকে খুব পছন্দ করেছিলেন।
মৃত্যুর পর আবিষ্কৃত হয় ‘লা জার্নাল’ নামক ফরাসি উপন্যাস এবং ‘বিয়াঙ্কা’ নামক ইংরাজি উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি। সম্ভবত, এই দু’টিই কোনও ভারতীয়র লেখা প্রথম ইংরাজি ও ফরাসি ভাষার উপন্যাস। পাশাপাশি খুঁজে পাওয়া যায় দু’টি স্বরচিত কবিতার বইয়ের পাণ্ডুলিপি ‘এনসিয়েন্ট ব্যালাডস’ ও ‘লিজেন্ডস অব হিন্দুস্তান।’ পিতা গোবিন্দচন্দ্র প্রত্যেকটিই প্রকাশ করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। ‘লা জার্নাল’ অনুবাদ করে বসুমতি পত্রিকায় ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ করেন পৃথ্বীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। ১৯৫৬ সালে তা বই হিসাবে প্রকাশিত হয়। ভূমিকা লিখেছিলেন প্রেমেন্দ্র মিত্র।
সূত্র : bongodorshon.com ও www.dainikazadi.org
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/20/2020