অসমীয়া   বাংলা   बोड़ो   डोगरी   ગુજરાતી   ಕನ್ನಡ   كأشُر   कोंकणी   संथाली   মনিপুরি   नेपाली   ଓରିୟା   ਪੰਜਾਬੀ   संस्कृत   தமிழ்  తెలుగు   ردو

অক্ষমতা

অক্ষমতা

সম্প্রতি ফেসবুক এবং অ্যাপল ঘোষণা করেছে, --- যে সমস্ত নারী চল্লিশ বছর বয়স অবধি তাঁদের মাতৃত্ব, অথবা গর্ভধারণের ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইবেন, তাঁদের জন্য এই দুই সংস্থা বিপুল ভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে। এই নারীদের ডিম্বাণু সংরক্ষণের জন্য যে ব্যয় তার সমস্তটাই বহন করবে সংস্থা দু’টি। মানব ডিম্বাণু সংরক্ষণের মাধ্যমে নারীদের ডিম্বাণুগুলিকে নিষ্কাশন করে হিমায়নের মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হয়। পরবর্তীকালে, একই ডিম্বাণুগুলিকে নিষিক্ত করে জরায়ুতে প্রতিস্থাপন করা হয় ভ্রূণ হিসেবে। সাধারণত এই ডিম্বাণু সংরক্ষণের প্রক্রিয়া উপায় হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল একেবারেই কিছু চিকিত্সামূলক প্রয়োজনে। একেবারে শুরুর দিকে, কর্কট রোগে আক্রান্ত নারীদের জন্যই এই প্রক্রিয়া শুরু হয়, কারণ এই মারণ রোগের চিকিত্সার ফলে ডিম্বাণু নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রবল। কিন্তু এখানে দেখা যাচ্ছে, ডিম্বাণু সংরক্ষণের প্রক্রিয়াটি সাধারণ সুস্থ নারীদের অবলম্বন হিসেবে এগিয়ে দিচ্ছে ফেসবুক ও অ্যাপল ৷ এবং স্বেচ্ছায় এই ব্যয়ভার বহন করার সিদ্ধান্ত। পুরুষ আধিপত্যে বলীয়ান সিলিকন উপত্যকায়, উচ্চপদে নারীদের প্রায় দেখা পাওয়া যাচ্ছে না বললেই চলে। অতএব, কর্মক্ষেত্রে নারীপুরুষের সমানুপাত নিশ্চিত করার জন্য এটি দুই সংস্থার তরফে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। তা ছাড়াও নির্ধারিত বয়সে গর্ভধারণ কোনও নারীকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে কর্মজগতে আত্মপ্রতিষ্ঠা করা থেকে।

সুতরাং এই গর্ভধারণের সময়টাকেই যদি বেঁধে ফেলা যায়, তা হলে দু’কুলই রক্ষা হয়। এগব্যাঙ্কস, বিশ্বের প্রথম ডিম্বাণু সংরক্ষণের প্রক্রিয়াকে মূলধন সহায়ক সংস্থা, সম্প্রতি বিভিন্ন সম্মেলন করছে এই আধুনিক বিমাকরণকে আরও প্রত্যয়িত করে তোলার জন্য এবং তার জন্য আরও পুঁজি জোগাড়ের স্বার্থে।

সত্যিই কি তাই? কোনও প্রশ্ন ছাড়াই কি মেনে নেওয়া যাচ্ছে এই লোভনীয় ব্যবস্থা? শর্তাবলি প্রযোজ্যের মতো কিছু বিষয় এ ক্ষেত্রেও বহুমাত্রায় প্রাসঙ্গিক। উল্লেখযোগ্য, চিকিত্সাবিজ্ঞান কিন্তু সন্তানধারণের এই উপায়টিকে নিশ্চয়তার মান দিতে এখনও অরাজি। দ্য আমেরিকান সোসাইটি অফ রি প্রডাক্টিভ মেডিসিন এখনও অবধি সংরক্ষিত ডিম্বাণু থেকে জাত সন্তানদের কোনও ব্যাপক পরিসংখ্যান দিতে পারেনি --- বরং প্রজননের ক্ষমতাকে বিলম্বিত ও ব্যাহত করার মাধ্যম হিসেবে ডিম্বাণু সংরক্ষণের প্রক্রিয়ার ওপর আশ্বাস রাখাতে বার বার সাবধানই করছে এই সংস্থাটিও।

বিমাকরণের নামে তা হলে আমরা মূল্য দিচ্ছি নিশ্চয়তা, এবং আরও ব্যাপক অর্থে এটাকে দেখা যেতে পারে প্রলুব্ধ করার এক অনবদ্য পন্থা হিসেবে যেখানে নিয়োগকর্তার বৈষয়িক বৃদ্ধির মূল্যে বিকিয়ে যাচ্ছে নারীর মাতৃত্ব।

নারী ক্ষমতায়নের পরিপন্থী এই সুবিধা ব্যবস্থা তা হলে কি একান্তই স্বার্থশূন্য এবং উন্নত কর্মজীবনের পরিদর্শক কেবল? যত দৃশ্যের জন্ম হয়, তার সঙ্গে সঙ্গে জন্ম হয় প্রশ্নেরও। ডিম্বাণু সংরক্ষণের এই আশ্বাসবাণী তা হলে আগামী দিনে প্রভাবিত করবে স্বাভাবিক নিয়োগ প্রক্রিয়াকেও? আমি আর আপনি দু’জনেই সফলতার ইঁদুর দৌড়ে সামিল, কিন্তু যে মুহূর্তে ওই একটি চুক্তিপত্রে আমার সই আছে এবং আপনার নেই, সে মুহূর্তেই আপনি পিছিয়ে পড়লেন। ফলে আমার যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতার মান আপনার থেকে কম হলেও, কর্মক্ষেত্রে কিন্তু আমি আপনার চেয়ে সুপাত্রী। তা হলে যোগ্যতা মাপার পরাকাষ্ঠা হল আমার বিক্রয় মূল্য, ব্যক্তিগত জীবন ব্যক্তি অতিক্রম করে হল নিয়োগকর্তার ইচ্ছাধীন। তার পর সাড়ম্বরে চলবে আমার কর্মজীবন, আড়ম্বরে ডিম্বাণু সংরক্ষণ। কিন্তু গোলযোগ বাধে, যখন আমি চাই নিয়োগকর্তা বদল করতে। আমার প্রজননের বয়স এবং সক্ষমতার সঙ্গে আমার ডিম্বাণু রয়ে গেছে তারই আওতায়, নিপুণ সংরক্ষণে, তারই নির্ধারিত হিমঘরে। ডিম্বাণু সংরক্ষণের হস্তান্তর এ ক্ষেত্রে কতটা গ্রাহ্য বা আদৌ সম্ভব কিনা তার কিন্তু কোনও আলোচনা সেরে রাখা হয়নি আগেও। নিয়োগকর্তার ইচ্ছাধীন আমি এ বার তবে কি ক্রীতদাস? শুরুতেই আমরা যে নারী জাগরণের কথা শুনেছিলাম তার প্রকারান্তরে দেখি নিশ্চিত হচ্ছে নিয়োগকারী সংস্থার সিদ্ধিই। তাকে আর মাথা ঘামাতে হচ্ছে না প্রসবকালীন দীর্ঘ অবসর অথবা অসময়ের কর্মী ইস্তফা নিয়ে, আর বলা বাহুল্য যে এ ভাবেই নারী এবং পুরুষ সমান ভাবে হয়ে উঠছে তাদের বৃদ্ধি ও বিকাশের উপাদান। পুঁজিবাদী অর্থনীতি তা হলে আজীবন এ ভাবেই আস্তিনের নীচে ঢেকে রাখবে খঞ্জর, এবং সময় সুযোগ নিক্তিতে মেপে প্রোথিত করে রাখবে মেরুদণ্ড অবধি।

ডিম্বাণু সংরক্ষণের এই অভিনব সুব্যবস্থার ফলস্বরূপ জন্ম নিচ্ছে কিন্তু এক সমান্তরাল অর্থনীতিও। এগসুর‍্যান্স এবং এগব্যাঙ্কস-এর মতো সংস্থারাও পরজীবীর মতো পুষ্ট হচ্ছে এই সুনিয়ন্ত্রিত পুঁজিবাদী বন্দোবস্তে। এদের পরিকল্পিত চাতুর্যে আরও শক্তিশালী হচ্ছে পুঁজিবাদ; এবং তারাও সাহচর্যের হাত অবিন্যস্ত রেখেছে তত দিন, যতক্ষণ না ব্যক্তিগত জীবনচর্যা ছাপিয়ে যাচ্ছে আলোচ্য স্বার্থকে। তা হলে নারীসত্তার জাগরণের কথা বলে, কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গ-বৈষম্যের ব্যবধান কমিয়ে আনার আড়ে, আসলে নারীকেই ঠেলে দেওয়া হচ্ছে একটি বৃহত্তর দ্বন্দ্বের সম্মুখে, প্রশ্ন ওঠে। এক দিকে যৌথ জীবনের অনুষঙ্গ, ব্যক্তিগত ও পারিপার্শ্বিক প্রত্যাশা এবং বিপরীতে নিয়োগকর্তার, সুবিধার তকমা এঁটে চুক্তিপত্রের এগিয়ে দেওয়া, দুইয়ের মাঝখানে পড়ে যে অবিরত পরাজয়, তা কিন্তু একান্ত নারীরই। ব্যক্তিগত ইচ্ছেকে নামিয়ে আনা হচ্ছে অনুক্ত বাধ্যকতার স্তরে, এবং সেটা একেবারেই ব্যবসায়িক মূল্যায়নের নামে। এখানে প্রবল ভাবে উল্লেখযোগ্য যে ষাটের দশকের গোড়ার দিকে যে দ্বিতীয় তরঙ্গের নারীবাদী আন্দোলন জোয়ার তুলেছিল আমেরিকার বুকে, তার একটি প্রধান বিষয় ছিল কর্মস্থলে নারীর প্রজননগত অধিকার। চল্লিশের দশকে নারীদের অবস্থান লক্ষ্য করে সিমন দ্য বুভো তাঁর ‘দ্য সেকেন্ড সেক্স’ (১৯৪৯) বইতে দেখিয়েছেন তত্কালীন পিতৃতান্ত্রিক সমাজে নারীদের ‘অন্যান্য’ হিসেবে দর্শন। এই পুরুষ-কেন্দ্রিক মতাদর্শ গ্রাহ্য হয়ে বসেছিল আপামর সমাজের, ক্রমাগত যাকে পুষ্ট করেছিল কিছু কাল্পনিক চেতনা। এই ফরাসি নারীবাদী স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে নারী ঋতুমতী হওয়ায়, গর্ভধারণে এবং স্তন্যপান প্রদানে সক্ষম হওয়ার কারণে --- তাদের আয় উত্পাদনের ক্ষেত্রে বৈধতার উপর ফতোয়া জারি করা নিতান্তই অমূলক ও নিন্দনীয়। এই আন্দোলনের ফসলস্বরূপ ১৯৬৪ সালে আমেরিকার প্রেগন্যান্সি ডিসক্রিমিনেশন অ্যাক্ট, মার্কিন গর্ভবতী মহিলাদের কর্মস্থলে বৈষম্যের শিকার হওয়াকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে, এবং এ-ও নিশ্চিত করে যে কোনও মহিলাকেই বহিষ্কার বা কর্মসংস্থানে অস্বীকার করা যাবে না তার বর্তমান অথবা ভবিষ্যৎ গর্ভধারণের সম্ভাবনা বিবেচ্য রেখে। কর্কট আক্রান্ত মানুষকে এই বিমা বিক্রি এক জিনিস। কিন্তু সুস্থ, প্রজননে সক্ষম মহিলাদের এই সুযোগের পসরা সাজিয়ে দেওয়া বিভ্রান্তির সৃষ্টিকারী মাত্র। সামাজিক ভাবে দায়িত্বহীনও। সফল কর্মজীবন ও গর্ভধারণকে একে অন্যের নেতিবাচক অনুঘটক হিসেবে লড়িয়ে দেওয়া আসলে আর এক কৌশল, প্রখর পিতৃতান্ত্রিক চরিত্রকে আভিধানিক অর্থে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার। পুরুষ চেতনায় যা নিতান্তই ব্যক্তিগত নির্বাচন, নারীর ক্ষেত্রে তার অন্যথা শুধুমাত্র তার শারীরিক নিয়মকে মূল্যায়িত করার নামে, সমকালীন সমাজ চেতনায় নিতান্তই বেমানান। সুতরাং এই পদক্ষেপ প্রগতিশীলতার কথা বলে না, নিবর্তন এবং নারীবাদ বিরোধী চেতনার উদ্ভব ঘটায়।

সূত্র: এই সময়, রবিবারোয়ারি, ৮ মার্চ, ২০১৫

সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/11/2020



© C–DAC.All content appearing on the vikaspedia portal is through collaborative effort of vikaspedia and its partners.We encourage you to use and share the content in a respectful and fair manner. Please leave all source links intact and adhere to applicable copyright and intellectual property guidelines and laws.
English to Hindi Transliterate