স্টেজে খেলা দেখিয়ে চলেছে পিঙ্কি খান। গ্যালারিভর্তি দর্শক। তাঁরা মুহুর্মুহু হাততালি দিচ্ছেন। গোটা সার্কাস এরেনা উৎসাহ দিয়ে চলেছে পিঙ্কিকে। ঝলমলে লাল রঙা কস্টিউমে সজ্জিত, সোনালি চুলের বছর তিরিশের পিঙ্কি এক চাকায় প্রদক্ষিণ করে চলেছে গোটা স্টেজ --- কখনও সাইকেলের ওপর দাঁড়িয়ে স্টেজ প্রদক্ষিণ করছে, কখনও পা দু’টো সাইকেলের ওপর তুলে দিয়ে হাত দিয়ে প্যাডেলিং করে চলেছে, সব শেষে হাত ছেড়ে অনেকের সঙ্গে গ্রুপ প্যাডেলিং। খেলা শেষে তার তাঁবুতে বসে একটু জিরিয়ে নিচ্ছিল পিঙ্কি। আর তখনই কথা বলছিলাম তার সঙ্গে। ‘আমার মা সাইকেলের খেলা দেখাতো, আর বাবা ছিল সাইকেলের ট্রেনার। আমি সার্কাসে খেলা দেখাই, বাবা এটা কোনও দিনই চায়নি। কিন্তু ওদের সাংসারিক কষ্ট আমি সহ্য করতে না পেরে খেলা দেখানো শুরু করি। এই সার্কাসের তাঁবুতেই আমি বড় হয়েছি। সাইকেল চালানো শিখেছি বাবাকে লুকিয়ে লুকিয়ে। বাবা যখন সকলের ট্রেনিং শেষ করে চলে যেত আমি তখন লুকিয়ে লুকিয়ে সাইকেল চালাতাম। এমন ভাবে চালাতাম যাতে বাবা বুঝতে না পারে। এর পর একটা সময়ে মা অবশ্য আমাকে সাইকেল চালনা শেখাতে শুরু করল। আমার মা-বাবা এখন মুম্বইতে থাকে’। নিজের জীবনের কথা বলতে বলতে গলা ভারী হয়ে আসে সাইকেল কন্যার। ‘এখানকার মালিক কিন্তু খুব ভালো। আমায় বাবার মতোই স্নেহ করেন, ভালোবাসেন। ওঁকে দেখতেও ঠিক আমার বাবার মতো। উনি আমার বিয়েও দিয়েছেন’, সহাস্যে জানিয়ে দেয় পিঙ্কি।
পিঙ্কির বর একই সার্কাসে বাইকের খেলা দেখায়। যখন সার্কাসে খেলা দেখানো থেকে ছুটি মেলে তখন পিঙ্কি বরের সঙ্গে চলে যায় শ্বশুরবাড়ি। ‘আমি যখনই বাড়ি যাই বোরখা পরে যাই, না হলে রাস্তায় লোক আমায় দেখলেই বলে ওই দেখ সার্কাসের মেয়ে যাচ্ছে, তখন খুব খারাপ লাগে। দুঃখের ব্যাপার কী জানেন, অনেক মানুষ সার্কাসে আসে শুধু আমাদের শরীর দেখতে, খেলা দেখতে নয়’।
সূত্র: এই সময়, রবিবায়োয়ারি, ৮ মার্চ ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/29/2020