রাতের অন্ধকারে স্টেজের পর্দার পিছনে যেন আলো আঁধারির খেলা। মেয়েদের বাউন্ডারির ভিতরে একটা ২০০ ওয়াটের ডুম এমন ভাবে লাগানো হয়েছে যাতে চার-পাঁচটা তাঁবুই যেন ভালো ভাবে দেখা যায়। সবক’টা তাঁবুরই পর্দা নামানো। মেয়েদের খেলা দেখানোর পালা শেষ হয়েছে বেশ কিছুক্ষণ আগেই। প্রথম তাঁবুর পর্দা সরিয়ে ভিতরে ঢুকতেই ধাক্কা খেতে হল একটা লোহার রডে, এর মধ্যে ঝোলানো একটা সুইচবোর্ড মোটা দড়ি দিয়ে বাঁধা। এর থেকে ইলেকট্রিকের তার টেনে ঝোলানো হয়েছে ডুম প্রতিটা খাটের ওপর। তোষক, গদি, চাদর বিছানো চারটে খাট তাঁবুর ভিতর দু’দিকে দু’টো করে পাতা। খাটের ওপর লেপ, কম্বল বোঝাই করে রাখা। রাতের খাবার দিতে এখনও ঢের দেরি, তাই খাটের সামনে বসেই একটা পাম্প স্টোভে চাউমিন বানাতে ব্যস্ত খুশি। পাশের তাঁবুর পরিস্থিতি তখন বেশ গম্ভীর। লিসা, পায়েল, আভেরি, শান্তিরা সবাই মগ্ন টিভি সিরিয়াল ‘ভীরা’ দেখতে; চলছে ভীরার বিয়ের দৃশ্য! রিঙের খেলা দেখানোয় ওস্তাদ লিসা পরিচয় করিয়ে দিল সকলের সঙ্গে। নেপালের কাঠমাণ্ডুতে বাড়ি লিসা’র। আর ক’দিন পরেই বাড়ি যাবে সে, তাই গোছানো হয়ে গেছে স্যুটকেস। বাড়ির ভাইবোনদের জন্য বড়দিনের বেশ কিছু গিফটও কিনে ফেলেছে; জামা, বিদেশি পারফিউম, মেকআপ সবই আছে সেই লিস্টে। ‘সার্কাসে আমি অনেক ভালো আছি। এখানে আমাদের খাবারদাবারের কোনও সমস্যা হয় না, আমাদের জন্য রোজ খাবার তৈরি হয়। মাছ, মাংস, ডিম যা খেতে চাই সবই মালিক আমাদের দেন। টাকাপয়সা যা রোজগার করি সব বাড়িতে পাঠিয়ে দিই।’ রাতের অন্ধকারে সার্কাসের তাঁবুর আলো নিভে গেছে, মেয়েদের মুখের রঙ উঠে গেছে অনেক আগেই, খেলা দেখানোর জন্য বানান রঙিন পোশাকও তখন তাঁদের মাথার ওপর দড়িতে ঝুলছে অবহেলায়; সেগুলোও যেন শ্রান্ত, ক্লান্ত খেলা দেখিয়ে, এ শরীর থেকে অন্য শরীর ঘুরে ঘুরে। লক্ষ্মী, মতি, ঝুমুররাও তেরপলের নীচে হাঁটু গেড়ে বসে জিরিয়ে নিচ্ছে সে দিনের মতো।
সূত্র: এই সময়, রবিবায়োয়ারি, ৮ মার্চ ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/8/2020