‘Keep smiling, because life is a beautiful thing and there’s so much to smile about’... কথাগুলো নর্মা জিন বেকারের। অর্থাৎ, সেই নারী, যাঁকে গোটা বিশ্ব এককালে দিন-রাতের স্বপ্নে দেখেছে, হাবুডুবু খেয়েছে সে অধরা প্রেমে, আর বুকে খোদাই করে রেখেছে মেরিলিন মনরো নাম। অবাক লাগে খুব, এ কথা শুনে। মানে, এ কথা কি সত্যিই মেরিলিনের? সেই কোন এতটুকু বয়স থেকে মা-বাবাকে ছাড়া কত যে অছেদ্দা চোখ বুঝে হজম করতে হয়েছিল নর্মা জিনকে। মাত্র ছত্রিশ বছর বয়সের মধ্যে তিন বারের ডিভোর্সি হিসেবে নায়িকা মেরিলিনের শূন্যতাকেও যে সঙ্গ দেয় না এমন উবাচ! এখন কথা হল, তাঁর অন্ধপ্রেমে পড়া মানুষ, কিংবা তাঁকে কাজে লাগিয়ে অন্য মাত্রায় পৌঁছে যাওয়া মানুষরা, কখনও কি আসল মেরিলিনকে বোঝার এক ফোঁটা চেষ্টাও করেছেন? করলে হয়তো শেষ কালে তাঁকে অমন শূন্যতা অনুভব করতে হত না।
কিন্তু সে সব তো সত্যিই কিছুটা পরের কথা। শুরুর দিকে মাত্র দু’সেট পোশাকে ভর করে এগিয়ে আসা সাহসিনী তো সত্যিই কারও ম্যাটিনি আইডল ছিল না। বরং তার মানসিকতা ছিল আগাগোড়া ডাউন টু দ্য আর্থ। ফুটফুটে চাউনি আর নিখাদ জেল্লায় তোলা তার প্রায় এক্কেবারে গোড়ার দিককার ছবির নিলাম মুহূর্তে কেমন ঊনসত্তর বছর আগের ফ্ল্যাশব্যাকে গেলেন ব্রিটিশ অকশন হাউসের অকশনার আন্ড্রূ অলড্রিজ। প্রসঙ্গক্রমে যেখান থেকে কিছুটা অনাবশ্যক ভাবেই তাঁর নামের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে কিছু ব্যক্তি আর জায়গাও। বলে রাখা ভালো ছবির দুনিয়ায় পা রাখার আগে রেডিয়োপ্ল্যান মিউনিশন্স ফ্যাক্টরিতে তার চাকরির কথাটা। মডেলিং-এর প্রস্তাবটা ঠারেঠোরে তো আসে সেখানকারই স্থানীয় এক মিলিটারি ফটোগ্রাফারের থেকে। যদিও সে সবের পাকাপাকি শুরুর সুবাদেই এর পরই উঠে আসে বেভার্লি বুলেভার্ডের কাছেই পশ্চিম হলিউডের অনামি গলি কিংবা প্রয়াত ছবিকর জোসেফ জসগুরের কথাও। তিনিই সেই আলোকচিত্রী যার লেন্সের ধার ‘নাইস্ ক্যালিফোর্নিয়া ওয়াইফ’ থেকে নর্মা জিনকে তুলে দিয়েছিল হলিউড হার্টথ্রব মেরিলিনের সাম্রাজ্যে। হ্যাঁ শুধু একটা সাদা কালো ছবিতেই প্রায় বাজিটা জিতেছিল নর্মা! স্বাভাবিক ভাবেই সেখান থেকে লাভের অঙ্ক ঘরে তুলেছিল এমেলাইন স্নিভ্লির ব্লু-বুক এজেন্সিও। জন লি টাওয়ার্স থেকে মালিবুর জুমা বিচ্ প্রতিশ্রুতিমান মডেল হিসেবে মেরিলিনকে লেন্সবন্দি করতে এর পর চষে বেড়িয়েছেন জসগুর। নর্মার ভাগ্যের শিকেটাও শেষমেশ ছিঁড়েছিল সেই জসগুরের তৈরি পোর্টফলিও ধরেই। অপেক্ষা ছিল শুধু অভাবনীয় একটা ব্রেক থ্রুর, যা মিলেওছিল প্রায় হাতেনাতেই। টোয়েন্টিয়েথ সেঞ্চুরি ফক্সের বিগ বস্, পরিচালক বেন লিয়নের হাতে পড়তেই এর পর যাকে বলে একলাফে কেল্লাফতে। কোঁকড়া চুল আর অমন আকর্ষণীয় চেহারার সঙ্গে স্মিত হাসিতে বছর কুড়ির নর্মার লুক আর জসগুরের হাতের ভেলকিতে সে দিনই ঘটেছিল মেরিলিনের জ্যাকপট প্রাপ্তি।
স্ট্যাননিক বিচ পার্কের তথ্যের কানাঘুষোয় এর পর অবশ্য ম্যারলিনের তরফে জসগুরের কৃতিত্বকে খাটো করার কিছু গালগপ্পো শোনা গেলেও জসগুর কিন্তু এ ব্যাপারে সে ভাবে কখনওই মুখ খোলেনি। বরং দিনের শেষে আম ভক্তের প্রশংসা তাকে যতটা না আনন্দিত করেছিল তার চেয়ে তার নিজের ভালো লাগা ছিল এই ভেবে যে মেরিলিনের মতো কাউকে প্রোমোট করার পেছনে তার একটা বড় ভাগ ছিল। এ সব অবশ্য নতুন কিছু নয়, অবাক করা বিতর্কের চাপানউতোর হলিউডের হটসিটে মেরিলিনের অধিষ্ঠানের আগে থেকেই তার এক রকম দিন রাতের সঙ্গী ছিল। যার লংটার্ম সুদ ঘরে তুলতে কখনও বিপণি হয়েছে টনি জেরেসের ‘মেরিলিন মনরো : মাই লিটল সিক্রেট’ বইয়ের কেচ্ছা তো কখনও নামী ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ। তার সাফল্যকে বেআবরু করার সব চেষ্টা জলে না গেলেও তার ছত্রিশ বছরের ছোট্টো জীবনে মনে রাখার মতো দাগ কেটে তিনিই কিন্তু ছিলেন আল্টিমেট জয়ী। যার ছাপ নিয়ে প্রায় সত্তর বছর আগের তার সে ছবিটাই জনৈক শো-বিজ ছবি সংগ্রাহকের আর্কাইভে সেরা টেম্পলেট হয়ে রাজ করতে চলল মাত্র চারহাজার দুশো পঞ্চাশ পাউন্ডের বিনিময়ে।
সূত্র: এই সময়, রবিবারোয়ারি, ৮ মার্চ, ২০১৫,
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/28/2020