আজও নাকি সোনা মেলে বালুতটে, দেখতেও মেলে নদীচরে সকাল সাঁঝে। তাই নদীর নাম সুবর্ণরেখা। সেই সুবর্ণরেখার ঘাটে শিলা অর্থাৎ ঘাটশিলা। দূরে প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে পাহাড়শ্রেণি। পাশে মৌভাণ্ডারে রয়েছে ব্রিটিশ আমলে তৈরি হিন্দুস্তান কপার। মোসাবনি সহ নানা খনি থেকে আসছে তামা সহ বিভিন্ন ধাতু। কেবল শনিবার বারবেলায় বন্ড সই করে কারখানা ও ৩০০০ ফুট নীচে নেমে খনি দেখার সুযোগ মেলে পর্যটকদের। ছড়িয়ে ছিটিয়ে আদিবাসী গ্রাম। ঘাটশিলা অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর জায়গা, জলে হজমি গোলা।
রেললাইনের সাথে, সমান্তরাল ভাবে বয়ে চলেছে সুবর্ণরেখা --- মাঝে রাজপথ। আর সুবর্ণরেখা নদীকে ভর করে শহরের বিস্তার। ডোহিজোড়ামুখী বাঁ হাতের পথে বিভূতিভূষণের বসতবাড়ি ‘গৌরীকুঞ্জ’। অপুর স্রষ্টার আকর্ষণে বাংলা থেকে সংস্কৃতিবানেরা আসেন ঘাটশিলায়। কাছেই পাণ্ডব পাহাড়ে রয়েছে কালী মন্দির। শাল, আমলকিতে ছাওয়া ডোহিজোড়া, মোসাবনির পরিবেশও সুন্দর। দূর-দূরান্তে পাহাড়ি টিলা, নীচে বয়ে যাচ্ছে সুবর্ণরেখা। নদীর জল রক্তিম-নীলাভ। সুবর্ণরেখা পেরিয়ে ডান হাতি পথে এক কিলোমিটার গেলে রাতমোহনা পাহাড়ি টিলায় সূর্যাস্ত দেখা অসাধারণ অভিজ্ঞতা।
রেল স্টেশনের পূবে থানা লাগোয়া পশ্চিমে আদিবাসীদের দেবী উগ্ররূপা রণকিনির মন্দির। ডোহিজোড়ায় রয়েছে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ও বিবেকানন্দ আশ্রম তথা মন্দির। রেল স্টেশন থেকে ১ কিমি গিয়ে ফুলডুংরি পাহাড়ি টিলাটিও দেখবার মতো। ঘাটশিলা থেকে ডোহিজোড়া/মৌভাণ্ডার পেরিয়ে ঘণ্টা পাঁচেকের পথে দেখে নেওয়া যায় সিদ্ধেশ্বর পাহাড়ের শিব ও পার্বতী মন্দির। টিলার পাশ দিয়ে মেঠোপথ মাড়িয়ে ৯ কিমি গেলে বুরুডি বাঁধ। এখান থেকে জল যাচ্ছে চাষের কাজে। সবুজ বনানী, সুবিস্তীর্ণ উপত্যকা, চারপাশে পাহাড় ঘেরা মালভূমির মতন। নীলচে সবুজ শান্ত জলে দলমা পাহাড়ের ছায়া ভাসে। ফেরার পথে ঘাটশিলা থেকে আড়াই কিমি দূরের ধারাগিরি জলপ্রপাতটিও দেখে নেওয়া যায়।
তবে ঘাটশিলা ভ্রমণ করলে আপনার বারবারই মনে হবে, এ যেন ভিন রাজ্য নয়, পশ্চিমবঙ্গেরই কোনও ছোট ছোট জেলা শহরে এসেছেন আপনি। ইতিহাসের কথা যদি ছেড়েও দিই, বাঙালি জনগোষ্ঠী, বঙ্গ সংস্কৃতির চিহ্ন এখানে এতটাই প্রকট।
সুত্রঃ পোর্টাল কনটেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/26/2020