সাঁওতাল, বেদিয়া, ওঁরাও সম্প্রদায়ের আদিবাসী অধ্যুষিত ছোটনাগপুর অধিত্যকায় দামোদর বছরের পর বছর তার ভয়াল মূর্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, ধ্বংস করেছে জনপদ, বিনষ্ট হয়েছে শস্য সম্পদ। পরিস্থিতি সামাল দিতে আশীর্বাদ হয়ে এল বিজ্ঞান। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে ১৯৪৮-এর ৭ জুলাই গঠিত হয় দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন বা ডিভিসি । বোকারোর ইস্পাত, চিত্তরঞ্জনের লোকোমোটিভ, ধানবাদের কয়লায় সে পরিকল্পিত ভাবে বেঁধে ফেলল ৪৯২ কিমি দীর্ঘ দামাল নদ দামোদরকে। কোথাও বা বাঁধ দিয়ে জলাধার হল, সেই জল গেল কৃষিক্ষেত্রে। আবার কোথাও বা জল বিদ্যুৎ তৈরি করে কলকারখানার যন্ত্র চালাল। এই পরিকল্পনায় চারটি বাঁধ পড়েছে , তিলাইয়া ও মাইথনে বরাকর নদে, কোনারে কোনার নদে ও পাঞ্চেতে মূল দামোদর নদে। এ ছাড়া তাপবিদ্যুৎ তৈরি হচ্ছে বোকারো, চন্দ্রপুরা, দুর্গাপুর ও মেজিয়ায়। আর জল বিদ্যুৎ হচ্ছে মাইথন, তিলাইয়া ও পাঞ্চেতে। এই সবক’টি জায়গাই পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়। শুধু বাঁধগুলিই নয়, এগুলিকে ঘিরে রয়েছে নানা দর্শনীয় স্থান। সব মিলিয়ে পর্যটকদের আছে এই জায়গাগুলির মূল্যই আলাদা।
মাইথন প্রকল্পের সঙ্গেই রয়েছে ডিয়ার পার্ক, বার্ড স্যাংচুয়ারি। সেখান থেকে বাস পথে হ্যাংলা পাহাড়ে কল্যাণেশ্বরী মাতার মন্দির। জনশ্রুতি, এই মন্দির তৈরি করেছিলেন পঞ্চকোট রাজারা। এ ছাড়া রয়েছে চতুর্দশ শিব মন্দির।
পাঞ্চেৎ বাঁধ তৈরি হয়েছিল ১৯৫৬ সালে। মাইথনের মতো উল্লেখযোগ্য পর্যটক সমাবেশ না হলেও জল ও পাহাড়ের সমন্বয়ে এর আকর্ষণও ফেলনা নয়। ডিভিসি-র প্রকল্প গুলির মধ্যে পাঞ্চেৎ বৃহত্তম। পাঞ্চেৎ পাহাড়ের সানুদেশে পাঞ্চেৎ জলাধার। পাঞ্চেৎ দর্শনার্থীরা পাহাড়ের অপর দিকে ৬৪৬ মিটার উঁচু ১৮ বর্গ কিমি ব্যপ্ত গড়পঞ্চকোট পাহাড়ে বিরিঞ্চি থান ও অতীতের ভগ্নাবশেষ দেখে নিতে পারেন। এ ছাড়া রয়েছে বিরিঞ্চি নাথের মন্দির ও প্রকৃতি বীক্ষণ কেন্দ্র।
এগুলি ছাড়াও ডিভিসি-কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে আরও বেশ কয়েকটি পর্যটন কেন্দ্র। এর মধ্যে তিলাইয়া, কোনার জলাধার তো আছেই, এ ছাড়াও রয়েছে বোকারো থার্মাল পাওয়ার, চন্দ্রপুরা, চুল্লাপানি। ডিভিসির কাজের বিস্তার রয়েছে পশ্চিমবঙ্গেও।
সুত্রঃ পোর্টাল কনটেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/9/2020