পরমার্থ নিকেতনের স্বামী চিদানন্দ সরস্বতী বলেছেন, গঙ্গা দূষণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গঙ্গার তীরে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে নদী দূষণের কারণে প্রতি বছর ১০ লাখ মানুষ মারা যায় এবং এ বিষয়টি বেশির ভাগ মানুষই বুঝতে পারে না। বোমা বিস্ফোরণে ১০ জন আহত হলে গোটা বিশ্বে হইচই পড়ে যায়, অথচ এ ক্ষেত্রে কারও কোনও হেলদোল নেই।
গঙ্গাদূষণ শুধুমাত্র গঙ্গাতীরে বসবাসকারী ৪০ কোটি ভারতীয়েরই ক্ষতি করছে না, করছে ১৪০টি মাছের প্রজাতি, ৯০টি উভচর প্রাণীর প্রজাতি ও ভারতের জাতীয় জলচর প্রাণী গাঙ্গেয় শুশুকেরও।
২০১২তে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ-এর উদ্যোগে ন্যাশনাল ক্যানসার রেজিস্ট্রি প্রোগ্রাম-এর সমীক্ষায় দেখা যায় দেশের ৩০টি রাজ্যের মধ্যে গঙ্গাতীরবর্তী উত্তর প্রদেশ, বিহার বা পশ্চিমবঙ্গে ক্যানসারের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। সরকারি হাসপাতালের রেকর্ডই বলছে ভারতে শিশুমৃত্যুর জন্যে সব চেয়ে বেশি দায়ী গঙ্গাজলবাহিত সংক্রমণ। গঙ্গার তীর ধরে গড়ে ওঠা হাজারো কারখানার পরিবেশ আইন না মানা, সব জেনেও প্রশাসনের এক শ্রেণির চোখ বন্ধ করে রাখা, গঙ্গার তীরে বসবাসকারী লাখো লাখো গবিব মানুষের অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপনই এই গঙ্গা দূষণের জন্য দায়ী।
গঙ্গাকে দূষণমুক্ত রাখার দাবিতে হরিদ্বারের নিগমানন্দ সরস্বতী ১১৪ দিন অনশন করে মৃত্যুবরণ করেন ২০১১তে। তিনি তো রাজনীতির কোনও দলের কেউ ছিলেন না, শিল্পপতিও ছিলেন না। চার মাস ধরে তার অনশনশেষে মৃত্যুতে কেন্দ্রে কংগ্রেস সরকার বা উত্তরাখণ্ডে বিজেপি সরকার,কারও মাথাব্যথা হয়নি। মাথা ধরেনি মুখরোচক সংবাদে দেশ উত্তাল করা সংবাদমাধ্যমগুলোরও। শুধু পরিবেশকর্মী জয়া মিত্র, মহাশ্বেতা দেবী বা নদীবিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্রের ক্ষীণ কন্ঠের আক্ষেপ শোনা গেছিল।
গঙ্গাবক্ষের পাথর তোলা আর পাথর ভাঙার ক্রাশারের কারবারে সিলিকোসিসের মতো দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হচ্ছিলেন এলাকার গরিব মানুষ। তার প্রতিবাদেই অনশন চালিয়েছিলেন স্বামী নিগমানন্দ। তবু কেন্দ্র ও রাজ্য দুই সরকারই তাঁকে প্রায় নীরবে মরতে দিলেন।
সূত্র: bigyan.org.in
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/26/2019