গঙ্গার দূষণ বিপদমাত্রা ছুঁয়েছে অনেক আগেই। ফি বছর দুর্গাপ্রতিমা বিসর্জনের পর তা আরও ভয়াবহ আকার নিচ্ছে। ক্রমেই কমছে নদীর নাব্যতা। পরিস্থিতি এতটাই সঙ্গীন যে এ ভাবে চলতে থাকলে গঙ্গার নাব্যতা ২২ ফুট থেকে কমে আগামী ১০ বছরের মধ্যে মাত্র ৫ ফুটে দাঁড়াবে বলে পরিবেশবিদদের আশঙ্কা। অবিলম্বে কোনও ব্যবস্থা না নিলে, আগামী ১০ বছরের মধ্যে ফেরি ও জাহাজ পরিষেবা বন্ধ হতে পারে, আশঙ্কা তাঁদের।
কলকাতা শহরে বারোয়ারি ও বাড়ির পুজো মিলিয়ে মোট সংখ্যা ১৭০০। এর ওপর রয়েছে ছোটবড় সাড়ে ৫ হাজার লক্ষ্মীপ্রতিমা, আড়াই হাজার কালী প্রতিমা, হাজার খানেক জগদ্ধাত্রী প্রতিমা ও ছটপুজোর জন্য জলে ফেলা হাজার মেট্রিক টন কলা, ফুল ও বেলপাতা। সব মিলিয়ে ৩০ দিনের ব্যবধানে চার চারটি বড় উৎসব গভীর সংকটে ফেলছে গঙ্গাকে।
ভারতের নদীগুলিকে বাঁচাতে প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী নদী পরিবেশ রক্ষা পরিষদ গঠন করেছিলেন। কলকাতায় পরিষদের অফিস বন্ধ ২০০২ থেকে। তাই কোটি কোটি টাকা গঙ্গাতীরের সৌন্দর্যায়নের নামে খরচ হলেও নাব্যতা বাঁচাতে হালফিলে তেমন তৎপরতা চোখে পড়ে না। মাঝেমধ্যে হাইকোর্টের নির্দেশে রাজ্য প্রশাসন কিছু কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করে কিন্তু সেগুলি আদৌ মানা হয় কিনা, পরিকাঠামোর অভাবে সে বিষয়ে নজরদারি করা যায় না।
ভারতীয় পরিবেশবাদীরা অভিযোগ করে বলছেন, মূর্তির গায়ে সিসাযুক্ত রং এবং ক্যাডমিয়ম ও অন্যান্য জৈব যৌগ গঙ্গার জলকে সারা বছর দূষিত করছে। সেই সঙ্গে মূর্তির মাটি, বাঁশ, ফুল, বেলপাতা, মালা বা শোলার যাবতীয় অলঙ্কার ভরাট করে তুলছে গঙ্গার তলদেশ। বিসর্জনের পর মূর্তির গায়ে থাকা সিসা ও ক্যাডমিয়াম গঙ্গাতে মিশে মাছের মাধ্যমে মানুষের শরীরে ঢোকে। স্নানে ও পানে সিসা নিয়মিত শরীরে ঢুকলে মানুষের বুদ্ধি কমে, স্মৃতি হ্রাস পায়, রক্তে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি হয়, কোষ্ঠকাঠিন্যও দেখা দেয়। কলকাতার মানুষের শরীরে নানা ভাবেই নিয়মিত সিসা ঢুকছে। ক্যাডমিয়ামের কারণে দুরারোগ্য ব্যাধি হয় বৃক্কে, যকৃতে ও অস্থিমজ্জায়। মূর্তি বিসর্জন, আবর্জনা, নোংরা ও বর্জ্য নিক্ষেপের কারণে গঙ্গা হারিয়েছে তার স্বচ্ছতাও।
হিন্দুঘরে প্রতি দিন দেবতার পুজো হয়। পূজার উপচার ফুল, বেলপাতা, তুলসীপাতা, ধূপকাঠি, টিকে। এক দিনের পূজার পর এগুলো বর্জ্য পদার্থ। প্রতি দিন আসবে টাটকা ফুল,পাতা, পর দিন তা আবার বাসি হবে। যেখানে সেখানে ফেলা চলবে না, পাপ হবে, ফেলতে হবে জলে। সেই সুবাদে আসে কাগজের ঠোঙার কাগজ, প্লাস্টিকের ঠোঙার প্লাস্টিক, ধূপকাঠির পোড়াশেষে ধূপ না থাকা কাঠিটুকু, টিকের ছাই – নদীখাতের জলধারণক্ষমতা কমাতে, দূষক পদার্থের গাঢ়ত্ব বাড়াতে যাদের জুড়ি নেই।
সূত্র: bigyan.org.in
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/22/2020