পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাংশের জলপাইগুড়ি বিভাগের ছটি জেলা নিয়ে উত্তরবঙ্গ গঠিত। এই অঞ্চলের উত্তরে সিকিম ও ভুটান; পূর্বে অসম এবং বাংলাদেশের রংপুর ও রাজশাহী বিভাগ; দক্ষিণে পশ্চিমবঙ্গের প্রেসিডেন্সি বিভাগ ও পশ্চিমে বিহার ও নেপাল অবস্থিত। গঙ্গা নদী দক্ষিণবঙ্গ থেকে উত্তরবঙ্গকে পৃথক করেছে।
উত্তরবঙ্গের ছটি জেলা: কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর ও মালদহ। ভৌগোলিকভাবে এই অঞ্চলটি উত্তরে দার্জিলিং হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল ও দক্ষিণে গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলের মধ্যবর্তী তিস্তা-তোর্ষা-মহানন্দা অববাহিকায় অবস্থিত। অর্থনৈতিক দিক থেকে উত্তরবঙ্গ দক্ষিণবঙ্গের তুলনায় পশ্চাদপদ। তবে মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্যে এই অঞ্চলে পর্যটন শিল্প খুবই উন্নত। শিলিগুড়ি উত্তরবঙ্গের প্রধান শহর; এই শহর একাধারে পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ মহানগর এবং সমগ্র উত্তরপূর্ব ভারতের প্রবেশদ্বার। উত্তরবঙ্গের অন্যতম বেড়ানোর জায়গা চিলাপাতা বনাঞ্চল।
জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের প্রতিবেশী চিলাপাতা অরণ্য, আলিপুরদুয়ার জেলায়। আলিপুরদুয়ার শহর থেকে ২০ কিলোমিটার, হাসিমারা শহরের খুব কাছে।
কোচ রাজবংশের আদি পুরুষ বিশ্ব সিংহের তৃতীয় পুত্র চিলা রায়। ডুয়ার্সের সীমানায় আলিপুরদুয়ারের কাছে গভীর অরণ্যে চিলা রায় এক দুর্গ নির্মাণ করেন। সে দুর্গ রাজা নরনারায়ণের নামে পরবর্তী কালে নল রাজার গড় নামে পরিচিত হয়। আর যে অরণ্যে এই দুর্গ নির্মাণ করান চিলা রায় সেই অরণ্যই আজ চিলাপাতা অরণ্য নামে খ্যাত।
চিলাপাতা অরণ্য জলদাপাড়া আর বক্সা টাইগার রিজার্ভের মধ্যে হাতি চলাচলের পথ। এক সময়ে এই জঙ্গলে প্রচুর গণ্ডার ছিল। কোচবিহারের রাজারা এই জঙ্গলে গন্ডার শিকার করতেন। এখন গণ্ডারের সংখ্যা কিছু কম। তবে প্রচুর লেপার্ড আছে এই চিলাপাতায়।
মাদারিহাট বনবাংলোয় থেকে ঘুরে নেওয়া যায় চিলাপাতা। জঙ্গলের গভীরে একটি নজরমিনার আছে। অসাধারণ অবস্থা সেই টাওয়ারের, একেবারে ঘন অরণ্যে, শীলতোরসা নদীর পাড়ে। এখানে দিনে দুপুরে হাতি চরে বেড়ায়। কপাল তেমন হলে গণ্ডারও দেখা যায়। নদীর চরে কচি কচি ঘাস খেতে আসে হরিণের দল। এই ওয়াচটাওয়ারে কিছু ক্ষণ কাটিয়ে চলে যেতে পারো নল রাজার গড় দেখতে। কিছুই অবশ্য অবশিষ্ট নেই গড়ের, গোটা কতক ইটের দেওয়াল ছাড়া। তবে পরিবেশ অসাধারণ, একেবারে নিবিড় অরণ্য।
সূত্র: পোর্টাল কনটেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/14/2019