হোসেন শাহের আক্রমণে এবং পরবর্তী সময়ে ১৫৫৩ খ্রিস্টাব্দে কালাপাহাড় কামরূপ-সহ কোচবিহার আক্রমণের সময় কামতেশ্বরী মন্দির সম্পূর্ণ রূপে বিনষ্ট হয়ে পড়েছিল। ১৬৬৫ খ্রিস্টাব্দে মহারাজা প্রাণনারায়ণ বর্তমান কামতেশ্বরী মন্দিরটি পুননির্মাণ করেছিলেন। মন্দিরটির চারিদিক সুউচ্চ প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত। প্রধান ফটক দিয়ে মন্দির প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতেই প্রথম দেলাভিটা, গারোদঘর (ধনাগার) এবং হোমগৃহের পরেই কামতেশ্বরী দেবীর মূল পাকা মন্দির। মন্দিরের অভ্যন্তরে দেবীর সিংহাসনের উত্তরপাশে সূর্যমূর্তি এবং পৃথক চৌকিতে মহাদেব, নারায়ণ, গোপাল ও ব্রহ্মার মূর্তি স্থাপিত আছে। মন্দির প্রাঙ্গণের উত্তর পূর্বকোণে একটি মন্দিরে মহাদেব ও লক্ষ্মীনারায়ণ এবং দক্ষিণ পশ্চিমকোণে একটি মন্দিরে তারকেশ্বর শিব বিদ্যমান। রাজা প্রাণনারায়ণ মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করলেও কোনও মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেননি। মূর্তির পরিবর্তে কবচ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ওই কবচ যে রৌপ্য কৌটায় আবদ্ধ ছিল তার ওপরে ভগবতীর মূর্তি অঙ্কন করেছিলেন। কৌটার অভ্যন্তরে রক্ষিত বস্তু কেউ দেখতে পাননি এমনকী পূজারীও নন। পরবর্তীকালে কবচরূপী দেবী অপহৃত হলে শূন্য সিংহাসনকে পূজা করা হয়ে থাকে। প্রতি বছর বৈশাখ মাসে সারা মাসব্যাপী বিশেষ সমারোহের সঙ্গে পূজাপাঠ, হোম ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হয়।
কোচবিহারের সুভাষপল্লী অঞ্চলে অনাথনাথ শিবমন্দির মন্দিরটি দক্ষিণমুখী এবং উচ্চতায় প্রায় ২৮ ফুট। মন্দিরটি চারকোণা এবং চারকোণে চারটি স্তম্ভ মুসলিম স্থাপত্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। ইটের তৈরি এই মন্দিরটির প্রতিষ্ঠাকাল ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে। দেওয়ালের গায়ে দু’টি বিড়াল মূর্তি, দু’টি সিংহ মূর্তি ও একটি গণেশ মূর্তি সহ পদ্মের অলংকরণ আছে। সামনের দেওয়ালে খাঁজকাটা অনেক খোপ দেখা যায়। মন্দিরের ছাদের উপর গম্বুজ, গম্বুজের উপরে পদ্ম, আমলক ও ত্রিশূল রয়েছে। মন্দিরটির অভিনবত্বের মধ্যে দেওয়ালের গায়ে বিড়াল মূর্তির উপস্থাপনা যা পশ্চিমবঙ্গে আর কোনও মন্দিরে দৃষ্ট হয় না। এই উপস্থাপনার পিছনে হয়তো কোনও ইতিহাস বা উপাখ্যান থাকতে পারে কিন্তু তা অজানাই থেকে গেছে।
সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 8/27/2019