মন্দির নির্মাণ ক্ষেত্রে কোচবিহারের মহারাজা প্রাণনারায়ণের রাজত্বকাল কোচবিহারের স্বর্ণযুগ। ইনি ছাড়া কোচবিহারের আর কোন রাজা এত অধিক সংখ্যক মন্দির নির্মাণ করতে সক্ষম হননি। তাঁর রাজত্বকালে যে সমস্ত মন্দির নির্মিত হয়েছিল তন্মধ্যে হিরণ্যগর্ভ, আনন্দময়ী, নৃসিংহ ঠাকুর, সিদ্ধেশ্বরী, বাণেশ্বর, ক্রোটেশ্বর শিবমন্দির, বামাকালী ঘূর্ণেশ্বরী প্রভৃতি মন্দির উল্লেখযোগ্য।
প্রাণনারায়ণের মন্দির সৃজনের বিবরণী দেওয়ার জন্য যেকোনও পরিসরই কম পড়ে যায়। তবু আরও কিছু মন্দিরের বিবরণ না উল্লেখ করলে ঠিক হবে না।
মদনমোহন মন্দিরের পূর্ব দিকে দক্ষিণমুখী ভবানীদেবীর মন্দির। মন্দিরটি ইটের তৈরি এবং চার চালার ওপরে গম্বুজ অবস্থিত। গম্বুজের ওপরে পদ্ম, আমলক, কলস ইত্যাদি পরপর স্থাপিত। মন্দিরটি উচ্চতায় ২৮ ফুটের মতো হবে। মন্দিরাভ্যন্তরে রুপোর সিংহাসনে মাটির তৈরি দেড় ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট ভবানীদেবীর মূর্তি। দেবী দশভূজা, বামে সিংহ এবং দক্ষিণে বাঘের পিঠে দাঁড়িয়ে অসুর নিধনে উদ্যোতা। সম্ভবত মজারাজ প্রাণনারায়ণ কামতেশ্বরী মন্দির অনুকরণে এই মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন। এ ছাড়া মন্দিরের অভ্যন্তরে মহাকালের এবং কষ্টিপাথরের তৈরি ৪ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট সিংহবাহিনী দুর্গার মূর্তি রয়েছে।
কোচবিহার শহরে দেবীপল্লীতে বড়দেবীর পশ্চিমমুখী মন্দির। মূর্তি মৃন্ময়ী, দশভূজা। ইনি দুর্গা বা বড়মা বলে খ্যাত। গুঞ্জবাড়িতে মহারাজা শিবেন্দ্রনারায়ণের রানি ডাঙ্গর আয়ি কামেশ্বরী দেবী যে মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তার নামও ডাঙ্গরআয়ী হয়ে যায়। সম্ভবত তিনি উনিশ শতকের শেষ দিকে মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন। মন্দিরের ছাদ সমতল এবং চারকক্ষ বিশিষ্ট। ছাদ সমতল হলেও ওপরে গম্বুজ বিদ্যমান। মন্দিরাভ্যন্তরে সিংহাসনের উপরে রাধাবিনোদ মূর্তি শোভা পাচ্ছে। অন্যান্য কক্ষে রয়েছেন পাথরের নারায়ণ ও শিব এবং অষ্টধাতুর নির্মিত রাধাকৃষ্ণ, দুর্গা, কালী ইত্যাদি বিগ্রহ। মন্দিরের প্রবেশদ্বারের উপরে প্রতিষ্ঠা ফলক দেখা যায়। তাতে লেখা আছে ১২৯০ সাল। তবে বর্তমানে মন্দিরটি অবহেলায় এবং অনাদরে জরাজীর্ণ। মন্দিরের সম্মুখেই এক বিশাল দিঘির দেখা মেলে। দিঘিটি রাজমাতা দিঘি বলেই পরিচিত।
সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/21/2020