রাজপ্রাসাদ মানেই ইতিহাস। দেওয়ালের প্রতিটি ইঁট, প্রতিটি ঝাড়বাতি, বাগানের প্রতিটি তৃণে জড়িয়ে থাকে হারিয়ে যাওয়া সময়ের নানা চিহ্ন। তার মধ্যে অহংকারের আলো যেমন থাকে, তেনই থাকে বেদনার অন্ধকারও।
ঐতিহাসিক শহর কোচবিহার। শহর জুড়ে একের পর এক হেরিটেজ বিল্ডিং আর অসংখ্য দিঘি। যার মধ্যে প্রধান আকর্ষণ বিশাল রাজপ্রাসাদ। মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণের রাজত্বকালে ১৮৮৭ সালে ইংরেজদের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রাসাদটি নির্মিত হয়। বর্তমানে প্রাসাদের এক অংশে সংগ্রহশালা।
কোচবিহার শহর পুরোটাই তোর্সা নদীর তীরে অবস্থিত। পরিকল্পিত শহর হওয়ার সুবাদে অতি সুন্দর ও পরিষ্কার। বড় বড় গাছের সমারোহ, তার মধ্যে দিয়ে প্রশস্ত রাজপথ, প্রমোদ উদ্যান, বড় বড় দীঘি দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। দ্রষ্টব্য বস্তুর মধ্যে মহারাজার রাজপ্রাসাদ, রানির বাগান, ভিক্টোরিয়া কলেজ, গ্রন্থাগার এবং অবশ্যই মদনমোহন এবং অসংখ্য ছোটো বড়ো মন্দির মসজিদ, সাগরদিঘি, বড়দেবী মন্দির, ইন্ডোর স্টেডিয়াম, নরেন্দ্রনারায়ণ পার্ক প্রভৃতি। কাছেপিঠেই প্রাচীন জনপদ গোসানিমারি, বৈষ্ণবতীর্থ মধুপুর ধাম, বাণেশ্বর শিবমন্দির আর কোচবিহারের রাজাদের মৃগয়াভূমি বোচামারি বিল, আজকের রসিকবিল। কোচবিহার জেলার সুরম্য রাজপ্রসাদ ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে মহাজার প্রাণনারায়ণের নির্মিত। ইমারতের চূড়ায় ধাতু নির্মিত গম্বুজ আছে। প্রাসাদটিতে ইউরোপীয় স্থাপত্য রীতি লক্ষ্য করা যায়। তবে প্রাণনারায়ণ কর্তৃক নির্মিত রাজপ্রাসাদ ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত হয়ে গেলে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছিল। ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণ বর্তমান প্রাসাদটি নির্মাণ করেছিলেন। প্রাসাদে ওঠার জন্য পাঁচটি সিঁড়ি আছে। গম্বুজের চূড়া পর্যন্ত সিঁড়িটি কারুকার্য শোভিত। ইতালীয় স্থাপত্যকলা অনুসারে অলংকরণ সমৃদ্ধ এই মন্দিরটি পর্যটকদের কাছে বিশেষ আকর্ষণীয় সম্পদ। মন্দির নির্মাণ ক্ষেত্রে প্রাণনারায়ণের রাজত্বকাল কোচবিহারের স্বর্ণযুগ। ইনি ছাড়া কোচবিহারের আর কোনও রাজা এত অধিক সংখ্যক মন্দির নির্মাণ করতে সক্ষম হননি। তাঁর রাজত্বকালে যে সমস্ত মন্দির নির্মিত হয়েছিল টার মধ্যে হিরণ্যগর্ভ, আনন্দময়ী, নৃসিংহ ঠাকুর, সিদ্ধেশ্বরী, বাণেশ্বর, ক্রোটেশ্বর শিবমন্দির, বামাকালী ঘূর্ণেশ্বরী প্রভৃতি মন্দির উল্লেখযোগ্য।
সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/26/2020