বিষ্ণুপুর রাজাদের উৎস রহস্যাবৃত। বহু শতাব্দীকাল তাঁদের বাগদি রাজা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও বিষ্ণুপুরের রাজারা এবং তাঁদের অনুগামীরা দাবি করেন যে তাঁরা উত্তর ভারতের ক্ষত্রিয় বংশোদ্ভুত। এই অঞ্চলের আর্যীকরণের শেষ পর্যায়ে এই দাবি বিশেষ জোরালো হয়ে ওঠে। বিষ্ণুপুরের রাজারা মল্ল রাজা নামে পরিচিত। সংস্কৃত মল্ল শব্দটির অর্থ মল্লযোদ্ধা। তবে এই শব্দটির সঙ্গে এই অঞ্চলের মাল উপজাতির সম্পর্ক থাকাও সম্ভব। এই উপজাতির সঙ্গে বাগদিদের সম্পর্ক বিদ্যমান।
বিষ্ণুপুর-সংলগ্ন অঞ্চলটিকে অতীতে মল্লভূম বলা হত। মল্লভূম রাজ্যের কেন্দ্রীয় এলাকা ছিল বর্তমান বাঁকুড়া থানা এলাকা (ছাতনা বাদে), ওন্দা, বিষ্ণুপুর, কোতুলপুর ও ইন্দাস। তবে প্রাচীন বিষ্ণুপুর রাজ্যের আয়তন আরও বড়ো ছিল। উত্তরে সাঁওতাল পরগনার দামিন-ই-কোহ থেকে এই রাজ্য দক্ষিণে মেদিনীপুর পর্যন্ত প্রসারিত ছিল। পূর্বে বর্ধমানের পূর্বাঞ্চল থেকে পশ্চিমে ছোটোনাগপুরের একটি অঞ্চলও এই রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। মল্ল রাজারা এই সব অঞ্চলও মল্লভূমের অধিকারে আনেন।
বিষ্ণুপুরের অদূরে অযোধ্যা গ্রামে ইটের তৈরি বারোটি শিবমন্দির পাশাপাশি অবস্থিত। পঞ্চরথ দেউলরীতির এই দেবালয় উচ্চতায় ২৫ ফুট ও প্রস্থে ১০ ফুটের বেশি হবে না। এরই কাছাকাছি গিরিগোবর্ধনের মন্দির নির্মাণ রীতির এক অভিনব নিদর্শন। দেবগৃহের চালা প্রচলিত কোনও পদ্ধতিতে তৈরি না করে বড় বড় শিলাখন্ডের আকারে বিন্যস্ত। বিগ্রহটি শ্রীকৃষ্ণের, এ ছাড়া সতেরো চূড়াযুক্ত আটকোণা রাসমঞ্চটি উল্লেখযোগ্য। এই থানার অন্তর্গত জয়কৃষ্ণপুরে যত ছোটো ছোটো মন্দির নির্মিত হয়েছিল এমনটি আর কোথাও হয়নি বলে মনে করা হয়। ইট ও কোনও কোনও ক্ষেত্রে মাকড়া পাথরের নির্মিত দেউল একরত্ন পঞ্চরত্ন, দালান প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
শহরের জলাভাব মেটাতে মল্লরাজ বীরসিংহ এখানে অনেকগুলি দিঘি খনন করেন। লালবাঈ-এর গল্পকথা জড়িয়ে রয়েছে বিখ্যাত লালবাঁধকে ঘিরে। এ ছাড়াও রয়েছে কৃষ্ণবাঁধ, যমুনাবাঁধ, কালিন্দীবাঁধ, শ্যামবাঁধ, পোকাবাঁধ, চৌখনবাঁধ প্রভৃতি। লালবাঁধের কাছেই বিখ্যাত দলমাদল কামান। পাশে ছিন্নমস্তার মন্দির।
বিষ্ণুপুরে বহু প্রাচীন কীর্তির মধ্যে আছে গড়খাই দুর্গ। দ্রষ্টব্যবস্তু হল পাথরের তৈরি পাথর দরজা ও বীর দরজা, দলমর্দন বা দলমাদল কামান ইত্যাদি।
সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/29/2020