টেরাকোটার অপরূপ শৈলীর মন্দির, বিষ্ণুপুরী ঘরানার রাগসঙ্গীত আর বালুচরী-স্বর্ণচরীর কারুকাজে উঠে আসা ইতিহাসের নানান ছবি নিয়ে অনন্য বিষ্ণুপুর। বাঁকুড়া জেলার এই ছোট শহরটির পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের পর্যটন মানচিত্রে গুরুত্বপূর্ণ স্থান রয়েছে। বিষ্ণুপুরের মতো পুরাকীর্তিবহুল স্থান পশ্চিমবঙ্গে খুব কমই আছে। কিংবদন্তি অনুযায়ী, খ্রিস্টীয় অষ্টম শতক নাগাদ বিষ্ণুপুরে মল্লরাজ বংশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তখন এর নাম ছিল মল্লভূম। প্রায় এক হাজার বছরের দীর্ঘ রাজত্বকালে মল্লরাজবংশের হাত ধরে শিল্প-সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধির চূড়ায় ওঠে বিষ্ণুপুর।
বিষ্ণুপুরের মন্দিরগুলির অবস্থান বেশ কাছাকাছিই। রিকশা ভাড়া করে প্রধান প্রধান মন্দিরগুলি ঘুরে নেওয়া যায়। সব চেয়ে বিখ্যাত জোড়বাংলা মন্দির। মল্লেশ্বর, মদনমোহন, জোড়বাংলা, মুরলিমোহন, শ্যামরায় মন্দিরগুলি ইটের তৈরি। কালাচাঁদ, লালজি, মদনগোপাল, রাধামাধব, রাধাগোবিন্দ, রাধাশ্যাম, নন্দলাল মন্দিরগুলি ল্যাটেরাইট পাথরে নির্মিত। মন্দিরগুলিতে পোড়ামাটির অপরূপ ভাস্কর্যে ফুটে উঠেছে দেব-দেবী, সমাজজীবন, ফুল-লতা-পাতা, পশুপাখির নানান মোটিফ। বিষ্ণুপুরের মাঠে-ঘাটে ছড়িয়ে আছে নাম না জানা ছোট ছোট মন্দির। যে স্থাপত্যরীতি বিষ্ণুপুরে সব চেয়ে সমাদৃত তাকে একবর্তনী শৈলী বলা হয়। বাঁকানো কার্নিসযুক্ত দেওয়াল ও ইষৎ ঢালু ছাদের কেন্দ্রে একটিমাত্র চূড়ার বিন্যাস এই রীতির বৈশিষ্ট্য।
বিষ্ণুপুরের আরেক আকর্ষণ বিষ্ণুপুর মেলা। শীতের রোদ গায়ে মেখে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ জুড়ে (২৩-২৭ ডিসেম্বর) চলে এই মেলা। মেলার সময় আগে থেকে বুকিং করে আসাই ভালো।
বালুচরী আর স্বর্ণচরী শাড়ির জন্যও খ্যাত বিষ্ণুপুর। সংগ্রহে রেখে দেওয়ার মতো আরেকটি জিনিস হল হিন্দুপুরাণের দেবদেবীদের ছবি আঁকা দশাবতার তাস। আকবরের রাজা-উজির তাসের তুল্য বর্ণ বৈচিত্র্যে উজ্জ্বল, অতুলনীয় শিল্পকীর্তির দৃষ্টিনন্দন এই তাস তৈরিও দেখা যেতে পারে মদনমোহন মন্দিরের কাছে শাঁখারিবাজারে ফৌজদার বাড়িতে। এ ছাড়াও স্যুভেনির হিসেবে কেনা যায় বিষ্ণুপুরের মাটির ঘোড়া বা অন্যান্য পোড়ামাটির তৈরি ঘর সাজানোর জিনিসপত্র, ডোকরা, কাঠ বা শাঁখের কাজ। কেনাকাটায় আদর্শ রঘুনাথ সায়ের-এর সিল্ক খাদি সেবামণ্ডল বা বড় কালীতলায় মল্লভূমি সিল্ক সেন্টার।
শুধু স্থাপত্যই নয়, রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় সঙ্গীতজগতে যে বিশিষ্ট ঘরানার একদা সৃষ্টি হয়েছিল তার ধারা আজও অম্লান হয়ে বেঁচে আছে সঙ্গীত শিল্পীদের কন্ঠে। সঙ্গীতাচার্য যদুভট্টের জন্মস্থান এই বিষ্ণুপুরে। এখানকার রাধিকাপ্রসাদ, জ্ঞান গোঁসাই নিজস্ব ঘরানাকে পৌঁছে দিয়েছেন সঙ্গীতের জলসাঘরে।
নিকটতম স্টেশন বিষ্ণুপুর। বাঁকুড়া, কলকাতা, আসানসোল, দুর্গাপুরের মতো পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন শহর থেকে নিয়মিত বাসও যাচ্ছে বিষ্ণুপুরে।
পশ্চিমবঙ্গ পর্যটনের ট্যুরিস্ট লজ রয়েছে বিষ্ণুপুরে। পাশেই পৌরসভার পৌর পর্যটন আবাস। এ ছাড়া শহর জুড়েই রয়েছে নানান মান ও দামের বেসরকারি হোটেল।
সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/28/2020