পশ্চিমবঙ্গের কোনও প্রাচীন জনপদে শুধু কোনও একটি ধর্মের স্মৃতি চিহ্ন থাকবে, এমনটা হওয়ার কথা নয়। মুর্শিদাবাদেও তা হয়নি।
মুর্শিদাবাদ, বহরমপুরে যেমন অসংখ্য মসজিদ আছে তেমনি রয়েছে অসংখ্য রাজবাড়ি এবং হিন্দু দেবদেবীর মন্দির। বহরমপুর থানার বিষ্ণুপুরে প্রতিষ্ঠিত করুণাময়ী কালী বিশেষ জাগ্রতা দেবী বলে সাধারণ লোকের বিশ্বাস। দেবীর বর্তমান মন্দিরটি লালগোলার রাজপরিবার কর্তৃক নির্মিত। মন্দিরাভ্যন্তরে চার হাত বিশিষ্ট দেবীর অর্ধাঙ্গ মূর্তি, সঙ্গে রয়েছেন তাঁর ভৈরব মহাকাল শিব। করুণাময়ী কালীমন্দির প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে নানাপ্রকার কিংবদন্তি চালু আছে। শোনা যায়, কালাপাহাড় যখন দক্ষিণ ভারতে হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি ধ্বংস করেছিলেন তখন জনৈক ব্রাহ্মণ তাঁর হাত থেকে করুণাময়ীকে রক্ষা করার জন্য দক্ষিণ ভারত থেকে মূর্তিটিকে ওড়িশায় নিয়ে এসেছিলেন এবং পুরী যাওয়ার পথে মূর্তিটিকে আর রক্ষা করা সম্ভব নয় ভেবে নদীতে নিক্ষেপ করেন এবং জলপ্রবাহের পরে মূর্তিটি বিষ্ণুপুরের শ্মশানঘাটে এসে উপস্থিত হয়। দক্ষিণ ভারতের ভাস্কর্যের সঙ্গে বিষ্ণুপুরে প্রতিষ্ঠিত কালী মূর্তিটির সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।
মুর্শিদাবাদ থেকে ৬ কিমি দূরে কিরীটেশ্বরী মন্দির। কিরীটেশ্বরী একান্ন পীঠের অন্যতম। এই দেবীর পূর্ব নাম ছিল কিরীটকণা। দক্ষযজ্ঞে সতীর দেহ একান্ন অংশে বিভক্ত হয়ে ভারতে নানা স্থানে পতিত হয়েছিল। কিরীটেশ্বরী পীঠে সতীর কিরীটের এক কণামাত্র পড়েছিল বলে প্রবাদ আছে। মন্দিরটি পশ্চিমমুখী; মন্দিরের মধ্যে কোনও মূর্তি নেই। মূল মন্দিরটি ধ্বংস হলেও কারুকার্যময় প্রস্তর বেদিটি এখনও বর্তমান। প্রাচীন এই বেদির উপর আরও একটি বেদি আছে এবং এটিই দেবীর কিরীটরূপে পূজিত হয়। এই পীঠস্থানের দেবী বিমলা ও ভৈরব সম্বর্ত নামে খ্যাত। কিরীটেশ্বরী ভৈরব বলে যে মূর্তি পূজিত হয় তা প্রকৃত পক্ষে একটি বুদ্ধমূর্তি। সম্ভবত কিরীটেশ্বরীর মূল মন্দিরটি পঞ্চদশ শতাব্দীর পূর্বে নির্মিত হয়েছিল। ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গাধিকারী দর্পনারায়ণ এই মন্দিরের সংস্কার করেছিলেন। এই মন্দিরের পিছনে দু’টি শিবমন্দির রাজা রাজবল্লভের প্রতিষ্ঠিত বলে কথিত।
সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/27/2020