মুর্শিদাবাদে নবাবি শাসনের পত্তন হয়েছিল অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ-র আমলে। মুর্শিদাবাদ রেলস্টেশনের অদূরে কাটরা মসজিদ। ১৭২৩ খ্রিষ্টাব্দে মুর্শিদকুলি খাঁ এটি নির্মাণ করান। মূলত মন্দিরের উপাদান দিয়েই তৈরি হয়েছিল মসজিদটি এমন ভাবার যথেষ্ট কারণ আছে। তবে নির্মাণশৈলী অপূর্ব, যদিও অনেকাংশ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। পাঁচ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদের তিনটি বিধ্বস্ত; চার কোণে চারটি মিনারের উচ্চতা হবে আনুমানিক আশি ফুট, তন্মধ্যে দু’টি মিনার কালের কবলে পড়েছে। মসজিদটিতে এক সঙ্গে সাতশো জন বসে নামাজ পড়তে পারে। এটি শুধু প্রার্থনাগৃহ নয়, নবাবের সাময়িক বসবাসের জন্যও ব্যবহৃত হত। কালো পাথরের খিলানযুক্ত বিশাল প্রবেশদ্বার। ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দের ভূমিকম্পে মসজিদটির প্রভূত ক্ষতি হয়েছিল। কথিত আছে, মক্কার অনুকরণে এটি নির্মিত হয়েছিল। ভাবতেও বেশ অবাক লাগে যে মসজিদ চত্বরেই রয়েছে একটি শিব মন্দির। কাটরা মসজিদের পেছনেই রয়েছে নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ-র সমাধি। নবাবি যুগের ইতিহাসের এক অনন্য সাক্ষ্যকে তার কাঁধে নিয়ে এখনও নির্জন প্রান্তর জুড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে বড়া ইমামবাড়া।
নসীপুর রাজপ্রাসাদের অদূরে জাফরাগঞ্জ দেউড়ি অর্থাৎ মীরজাফরের প্রাসাদ আর মিরনের প্রাসাদ। শোনা যায় মিরনের এই প্রাসাদেই সিরাজদ্দৌলা খুন হয়েছিলেন আততায়ী মহম্মদি বেগের হাতে। জাফরাগঞ্জের অর্থ হল বেইমান বা নিমকহারাম দেউড়ি। এই দেউড়িতে আছে ইংরেজদের কাছ থেকে উপঢৌকন পাওয়া দুটি কামান। দেউড়ির বিপরীত দিকে জাফরাগঞ্জ সমাধিক্ষেত্রে শায়িত আছেন মীরজাফর ও তাঁর পরিবারের সহস্রাধিক মানুষজন। অদূরে মহিমাপুরে মুর্শিদকুলি-কন্যা আজিমউন্নিষার সমাধি। কথিত আছে, ব্যভিচারের অপরাধে কলিজাখাকি (প্রতি দিন একটি শিশুর কলিজা খেতেন) আজিমউন্নিষাকে জীবন্ত সমাধিস্থ করেন স্বামী সুজা খাঁ।
হাজারদুয়ারির অদূরে কাঠগোলায় দুগার পরিবার কর্তৃক তৈরি নন্দনকাননে একটি চার তলা বিশিষ্ট রাজপ্রাসাদের কাছেই অপূর্ব কারুকার্যমন্ডিত আদিনাথ মন্দির। ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে এটি তৈরি হয়েছিল।
জগৎশেঠের কুঠিবাড়ির অদূরেই মহিমাপুরে রাজা কীর্তিচাঁদ বাহাদুর হাজারদুয়ারী প্রাসাদের অনুকরণে তৈরি করেছিলেন নসীপুর রাজপ্রাসাদ। প্রাসাদটি এখন জীর্ণ। অনেক পৌরাণিক দেবদেবীর মূর্তি থাকায় দেবালয় বলেও ভুল হয়।
সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 3/30/2020