জলদাপাড়া অভয়ারণ্যের প্রবেশদ্বার মাদারিহাট। অরণ্যের দোরগোড়ায় মাদারিহাট ট্যুরিস্ট লজ। মাদারিহাট হাইওয়ের ধারেই অভয়ারণ্যে ঢোকার চেকপোস্ট। চেকপোস্ট থেকে অরণ্যের গভীরে ৮ কিমি দূরে হলং বনবাংলো। দোতলা কাঠের বাংলো। চারপাশে সাজানো বাগান। অদূরে হলং নদী। হলং নদীর ওপারে অরণ্য লাগোয়া খোলা জায়গায় সল্টলিকে নুন খেতে আসে হাতি, গন্ডারেরা। হলং বাংলোর সামনে থেকেই প্রতি দিন সকালে তিনটি ট্রিপে এলিফ্যান্ট রাইড হয়। কার সাফারিতেও জঙ্গল ঘোরা যায়। ২১৬ বর্গ কিমি ব্যাপী জলদাপাড়া অরণ্যের সেরা আকর্ষণ একশৃঙ্গ গন্ডার। এ ছাড়াও রয়েছে বাইসন, হগ ডিয়ার, ময়ূর, বুনো শুয়োর প্রভৃতি নানান জীবজন্তু এবং নানা প্রজাতির পাখি ও সরীসৃপ। শাল, খয়ের, শিশু, শিমূল, শিরীষ গাছের ঘনজঙ্গল চিরে বয়ে চলেছে তোর্সা, মালপি, হলং, কালিঝোরা, বুড়িতোর্সা প্রভৃতি নদী। নদীর জলে রয়েছে নানান প্রজাতির কচ্ছপ আর মাছ। অরণ্যের বড় অংশ জুড়ে রয়েছে বিরাট বিরাট ঘাসের বন। মাদারিহাট থেকে গাড়ি নিয়ে ঘুরে আসা যায় ১০ কিমি দূরের সাউথ খয়েরবাড়ি নেচার পার্ক অ্যান্ড লেপার্ড রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার থেকে। খয়েরবাড়ির অন্যতম আকর্ষণ লেপার্ড সাফারি পার্ক ও টাইগার রেসকিউ সেন্টার। লেপার্ড পার্কটির ভিতরে ব্যাটারিচালিত গাড়িতে ঘোরা যায়। বুড়িতোর্সার বুকে বোটিংয়েরও ব্যবস্থা আছে।
জলদাপাড়া থেকে ২৪ কিমি দূরে আদিবাসী গ্রাম টোটোপাড়া। অভয়ারণ্য সংলগ্ন টোটোপাড়া একটি গুরুত্বপূর্ণ নৃতাত্ত্বিক পর্যটনস্থল। টোটোপাড়া বিশ্বে টোটো উপজাতির একমাত্র আবাসস্থল। বর্তমানে টোটোদের জনসংখ্যা ১০০০ জনের কাছাকাছি। তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের জন্য সরকারি ও বেসরকারি স্তরে অনেক উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে। যাই হোক, টোটোদের গ্রামে তাদের উপজাতীয় রীতিনীতি প্রত্যক্ষ করা পর্যটকদের কাছে এক বিরল অভিজ্ঞতা।
চিলাপাতা অরণ্যের মধ্যে এই অঞ্চলের দেড় হাজার বছরের পুরনো নল রাজার দুর্গ দেখা যায়। এটি ঐতিহাসিক ও পুরাতাত্ত্বিক গুরুত্বের স্থল। ধ্বংসাবশেষের মধ্যে দুর্গের একটি দরজা ও ভগ্নপ্রাচীরই অবশিষ্ট আছে। পঞ্চম শতাব্দীতে গুপ্তযুগে এই দুর্গ নির্মিত হয়। বর্তমানে এই অঞ্চলটি অসংরক্ষিত। প্রাকৃতিক ভারসাম্যহানির ভয়ে এখানে বেশি পুরাতাত্ত্বিক খননকার্য চালানো হয়নি। চিলাপাতা অরণ্যের এক প্রজাতির গাছ দেখা দেয় যা থেকে মানুষের রক্তের মতো রংবিশিষ্ট তরল নিঃসৃত হয়। এই গাছের মাত্র কয়েকটিই দুর্গপ্রাকারের নিকট দেখা যায়। স্থানীয়দের মতে বিশ্বে এই গাছ অন্যত্র দেখা যায় না এবং এর কোনো উদ্ভিদবৈজ্ঞানিক নামও নেই।
শিলিগুড়ি থেকে ১১৯ কিমি দূরে জলদাপাড়া অভয়ারণ্য।
থাকা – মাদারিহাটে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগমের ট্যুরিস্ট লজ, বেসরকারি হোটেল। জলদাপাড়া অরণ্যের গভীরে হলং-এ রয়েছে বনবাংলো।
সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/2/2020
আলিপুরদুয়ার জেলায়, পূর্ব হিমালয়ের নীচে, তোর্সা নদী...