কলকাতা চিৎপুর অঞ্চলে অবস্থিত নাখোদা মসজিদ কলকাতার প্রধান মসজিদ। মহাত্মা গান্ধী রোড থেকে রবীন্দ্র সরণি ধরে দক্ষিণমুখী ৫ মিনিটের পথে জাকারিয়া স্ট্রিটের সংযোগস্থলে এই নাখোদা মসজিদ।
আগ্রার সিকান্দ্রায় মুঘলসম্রাট আকবরের সমাধির আদলে ইন্দো-সেরাসেনিক শৈলীতে লাল বেলাপাথরে এই মসজিদ নির্মিত হয়। এখানে আগে একটা ছোট মসজিদ ছিল। সেই জায়গাতেই এই মসজিদ তৈরি করেছিলেন কচ্ছের একটি ক্ষুদ্র সুন্নি মুসলিম সম্প্রদায় কাচ্ছি মেমন জামাত। তাঁদের নেতা আব্দুর রহিম ওসমান ছিলেন পেশায় সমুদ্র বণিক, তিনিই এই মসজিদ তৈরির অর্থ দান করেছিলেন। নাখোদা শব্দের অর্থ নাবিক।
১৯২৬ সালের ১১ সেপ্টেম্বর এই মসজিদের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়। মসজিদ সম্পূর্ণতা পায় ১৯৪২-এ। এই মসজিদ তৈরি করতে ১৫ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছিল। চার তলা বিশিষ্ট নাখোদা মসজিদের প্রার্থনাঘরে ১০ হাজার মানুষ প্রার্থনা করতে পারেন। এতে ১৫১ ফুট উঁচু তিনটি গম্বুজ ও দুটি স্তম্ভ আছে। এ ছাডা় ১০০ থেকে ১১৭ ফুট উঁচু স্তম্ভ আছে অনেকগুলি। মূল দরজাটি ফতেপুর সিক্রির বুলন্দ দরওয়াজার আদলে তৈরি।এর জন্য তোলেপুর থেকে গ্র্যানাইট পাথর নিয়ে আসা হয়েছিল। অসামান্য শিল্পময়তা ও অলংকরণের মেলবন্ধন দেখা যায় এই মসজিদের নির্মাণকার্যে।
উৎসবের সময় কলকাতার নাখোদা মসজিদটিকে চমৎকার ভাবে সুসজ্জিত করা হয়। মুসলিম উৎসব বা “পরবের” সময় এই মসজিদে ঘুরতে যেতে পারেন। মহরম জাঁকালো উৎসব। সুসজ্জিত দুলদুল-সহ তাজিয়া মিছিল বেরোয়। সঙ্গে চলে লাঠি খেলা ও অস্ত্র খেলার প্রদর্শনী। নাখোদা ঘিরে দোকানপাট। কেনেকাটার মাঝে স্বাদ নেওয়া যেতে পারে ফিরনির (মিষ্টান্ন)।
কখনও আপনি কলকাতার নাখোদা মসজিদে গেলে অবশ্যই সিন্দুরাইপট্টি-তে অবস্থিত হাফিজ জালালুদ্দীন মসজিদটি ঘুরে আসবেন। মুর্শিদাবাদের নবাবদের দ্বারা নির্মিত, মানিকতলার কারবালা মসজিদটিও পরিদর্শন করতে ভুলবেন না। টিপু সুলতান-এর উত্তর পুরুষদের দ্বারা নির্মিত ১৩টি মসজিদেরও উল্লেখ করা উচিত। এগুলি ছাড়াও রাজকুমার গুলাম মহম্মদের দ্বারা নির্মিত ধর্মতলা স্ট্রিটে অবস্থিত টিপু সুলতান মসজিদটিও খুবই জনপ্রিয়।
কলকাতার নাখোদা মসজিদটি পরিদর্শন করতে আপনি সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত যে কোনও সময়ে যেতে পারেন। এর জন্য কোনও প্রবেশমূল্যের প্রয়োজন নেই।
সূত্র: পোর্টাল কনটেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 8/25/2019