“পানিহাটি সম গ্রাম নাহি গঙ্গাতীরে। বড় বড় সমাজ সব পতাকা মন্দিরে” – পানিহাটির নাম যে শুধু জয়ানন্দের ‘চৈতন্যমঙ্গল’-এই রয়েছে তা-ই নয়, বৃন্দাবন দাসের ‘চৈতন্যভাগবত’, কৃষ্ণদাস কবিরাজের ‘চৈতন্য চরিতামৃত’ গ্রন্থেও পানিহাটির নাম পাওয়া যায়। শ্রীচৈতন্য আর নিত্যানন্দের পদধূলিধন্য পানিহাটি।
১৫১৪ সাল। নীলাচল যাওয়ার পথে শ্রীচৈতন্য পানিহাটির ঘাটে নৌকা ভেড়ালেন। গঙ্গাতীরে বটের ছায়ায় বিশ্রাম নিলেন সপার্ষদ। এখানে দেখা করতে এলান সপ্তগ্রামের জমিদার রঘুনাথ নারায়ণদেব। দীর্ঘকাল প্রভুর দর্শনে আসতে না পারায় দণ্ড চাইলেন। দণ্ড দিলেন শ্রীচৈতন্য --- “দধি চিড়া ভক্ষণ করাহ মোর গণে।” মচ্ছব চলল সারা দিনরাত। সেই বটবৃক্ষতলার নাম হল দণ্ডমহোৎসবতলা। আজও কার্তিক মাসের কৃষ্ণ একাদশী তিথির পরের রবিবারে এখানে মেলা বসে। দই-চিড়ে খাওয়া হয়।
এখানে গঙ্গার ঘাটের পাশেই রয়েছে শ্রীচৈতন্যের দারুবিগ্রহ। ঘাটের সামনে জটিলেশ্বর শিবমন্দির। দণ্ডমহোৎসবতলার কাছেই পাটবাড়ি – রাঘব পণ্ডিতের শ্রীপাট। শ্রীচৈতন্যের অন্তরঙ্গ পার্ষদ রাঘব পণ্ডিত এখানে শায়িত আছেন ৫০০ বছরের বেশি পুরনো মাধবী লতাকুঞ্জের ছায়ায়।
পানিহাটির দোসর খড়দহ, যেন যমজ শহর। খড়দহের প্রসিদ্ধি নিত্যানন্দের শ্রীপাট হিসাবে। সেই শ্রীপাট কুঞ্জবাটি নামে খ্যাত। পুবমুখো ঘরে নিত্যানন্দের মৃন্ময়মূর্তি। আছে দুই পত্নী বসুধা আর জাহ্নবীর সমাধি। এই কুঞ্জবাটি থেকেই ৬৮ বছর বয়সে বৈকুণ্ঠে যাত্রা করেন নিত্যানন্দ।
মন্দিরের শহর খড়দহ – শ্যামসুন্দর মন্দির, গোপীনাথ জিউ মন্দির, মদনমোহন জিউ মন্দির, রাধাবৃন্দাবনচন্দ্র মন্দির, অন্নপূর্ণা মন্দির, রাধাকান্ত মন্দির, বলরাম মন্দির – আরও কত শত মন্দির। এ ছাড়াও রয়েছে রাসমঞ্চ, দোলমঞ্চ।
সব মিলিয়ে ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে পানিহাটি, খড়দহ অঞ্চলের আকর্ষণই আলাদা। শুধু তারাই নয়, যারা ইতিহাসের কাছে পৌঁছতে ভালবাসেন, তাদেরও ভালবাসার জায়গা এই অঞ্চল। শহরাঞ্চল ঘেঁষা হওয়ায় এই অঞ্চলে চট করে বেড়িয়ে আসাও সুবিধা জনক। বৈষ্ণবতীর্থ পানিহাটি-খড়দহ শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে যাওয়া যায়। নামতে হয় সোদপুর স্টেশনে। কলকাতার বিভিন্ন জায়গা থেকে বাসেও যাওয়া যায়। বি টি রোডের ধারেই পানিহাটি-খড়দহ।
সূত্র: পোর্টাল কনটেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 8/24/2019