শুরু করা যেতে পারে নলহাটি দিয়ে। হাওড়া থেকে ট্রেনে চলে আসা যায় এখানে। ৫১ সতীপীঠের এক পীঠ। সতীর কন দেহাংশ পড়েছিল তা নিয়ে দ্বিমত আছে। অনেকে বলেন, সতীর কণ্ঠনলা পড়েছিল, আবার কেউ কেউ বলেন দেবী নলক অর্থাৎ নলা বাঁ নুলো বাঁ কনুইয়ের হাড় পড়ে এখানে। দেবী এখানে নলহাটেশ্বরী বা ললাটেশ্বরী। অনুচ্চ টিলার মাথায় মন্দির, ধাপে ধাপে সিঁড়ি উঠে গেছে। এক বেদীর উপর সিঁদুরে চর্চিত আধখানা চাঁদের আকারের একটা বড় পাথরের খণ্ডই দেবীর প্রতিভূ।
নলহাটি থেকে ১২ কিমি দূরে ভদ্রপুর। বাসেই চলে এসো। এখানকার বাসস্ট্যান্ডের ডাইনে আকালীপুরে দেবী আকালীর মন্দির। মহারাজ নন্দকুমারের স্বপ্নে পাওয়া দেবী এখানে মা কালী। মূর্তিতে বৈচিত্র্য আছে। সাপের উপর বসে সর্পসজ্জায় দেবী, দ্বিভুজা বরাভয়দায়িনী জগন্মাতা। মূর্তি কোষ্ঠীপাথরের। দীর্ঘ আয়তনয়না দেবীর প্রসন্ন রূপটি মনোমুগ্ধকর। প্রায় ২৪০ বছরের পুরনো মন্দিরটি আজ সংস্কারের অভাবে জীর্ণ।
ফিরে এসো নলহাটি। এখানে থেকে বাসেই চল রামপুরহাট। তারাপীঠ দর্শন সেরে নাও। তার পর ট্রেনে চলো মল্লারপুর, ১৬ কিমি। বাসেও যেতে পারো। স্টেশন থেকে ২ কিমি দূরে শিবগঞ্জে ২৫টি মন্দিরের এক কমপ্লেক্স। মল্লেশ্বর শিব এদের অন্যতম। চারচালা মন্দির। এই মন্দিররাজি খুবই পুরনো, ১২-১৩ শতকের।
এবার গন্তব্য সাঁইথিয়া – মল্লারপুর থেকে মুহুর্মুহু বাস। ট্রেনেও মাত্র ২৫ মিনিটের পথ। সাঁইথিয়াও অন্যতম সতীপীঠ, দেবীর কণ্ঠনালি, দ্বিমতে কণ্ঠহাড় পড়েছিল। স্টেশন চত্বরের বাইরেই নন্দিকেশ্বরী মন্দির। মন্দিরের অঙ্গন পাথরের টালিতে বাঁধানো। অশ্বত্থ ও বট গাছের বাঁধানো বেদীর প্রকোষ্ঠে তেল-সিঁদুরে চর্চিত এক শিলাখণ্ডই দেবীর প্রতিভূ।
এ বার সাঁইথিয়া থেকে সোজা বোলপুর, বাসে বা ট্রেনে। সেখান থেকে বাসে বা রিকশায় কঙ্কালীপীঠ, আরেক সতীপীঠ। দেবীর কাঁকাল বা কোমর পড়েছিল কুণ্ডের জলে। মন্দিরটি নতুন। দেবীর প্রতীক ত্রিশূল আর আছে পটে কালী রূপী কঙ্কালী।
ফিরে এসো বোলপুরে। সে দিনটি বোলপুরে কাটিয়ে শান্তিনিকেতন দেখে পরের দিন বাসে চলো নানুর, লাভপুর হয়ে ফুল্লরা, ৫০ কিমি পথ। এ-ও সতীপীঠ। দেবীর ঠোঁট পড়েছিল এখানে। অনুচ্চ টিলার মাথায় মন্দির। কোনও বিগ্রহ নেই। সিঁদুরে চর্চিত কচ্ছপাকৃতি শিলাখণ্ডই দেবীর প্রতিভূ। এখানেই সাঙ্গ করা যেতে পারে বীরভূমের দেবীদর্শন।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/28/2020