মহাবোধি সোসাইটি বৌদ্ধধর্মীয় একটি প্রতিষ্ঠান। অনাগারিক ধর্মপাল ১৮৯১ সালের ৩১ মে শ্রীলঙ্কার কলম্বো শহরে ‘মহাবোধি সোসাইটি অব শ্রীলঙ্কা’ গঠন করেন। ওই একই বছর মহাবোধি সোসাইটি অব ইন্ডিয়া-র উদ্বোধন করা হয়, যার প্রধান কেন্দ্র হয় কলকাতায়। এর উদ্দেশ্য ছিল ভারতে বৌদ্ধধর্মের পুনর্জাগরণ এবং বুদ্ধগয়া, সারনাথ ও কুশিনারায় প্রাচীন বৌদ্ধ তীর্থস্থানগুলোর পুনরুদ্ধার। সোসাইটির প্রথম সভাপতি ছিলেন স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় এবং সাধারণ সম্পাদক অনাগারিক ধর্মপাল। কলকাতার ২০/১ গঙ্গাধর বাবু লেনের অস্থায়ী কার্যালয়ে এর কর্মকান্ড শুরু হয়। ১৯২০ সালের ২০ নভেম্বর বুদ্ধের পবিত্র অস্থিধাতু প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে সোসাইটি কলকাতার ৪-এ বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিটে ধর্মরাজিক চৈত্য বিহার উদ্বোধন করে। সোসাইটি বুদ্ধগয়ায় বৌদ্ধদের হৃত অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠাসহ সমগ্র ভারতে বৌদ্ধধর্মের পুনর্জাগরণ ঘটাতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে। মহাবোধি সোসাইটিতে এক সময় ভারতীয় শ্রেষ্ঠ মনীষার সমন্বয় ঘটেছিল। স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ছাড়া এর সঙ্গে আরও সংশ্লিষ্ট ছিলেন মহাত্মা গান্ধী, রাজেন্দ্রপ্রসাদ, চিত্তরঞ্জন দাস, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, এস রাধাকৃষ্ণান, রাজা গোপালাচারী প্রমুখ গুণিজন। তাঁরা বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা ও সমর্থন দিয়ে সোসাইটির কর্মপ্রবাহকে শক্তিশালী করেন। ১৮৯৩ সালে সোসাইটির পক্ষ থেকে অনাগারিক ধর্মপাল আমেরিকার শিকাগো ধর্ম মহাসভায় অংশগ্রহণ করে বৌদ্ধধর্মের আদর্শ ও মর্মবাণী তুলে ধরেন। এতে বিশ্ব পরিমন্ডলে সোসাইটি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে।
বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ ত্রিপিটক ভারতের বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশ করে সোসাইটি জনসাধারণের নিকট বৌদ্ধ ধর্ম ও দর্শনের তত্ত্ব পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ করে দেয়। এতে মাতৃভাষায় ত্রিপিটক পাঠের ফলে জনসাধারণের মধ্যে বুদ্ধবাণী সম্পর্কে জানার আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। বৌদ্ধ ধর্ম-দর্শন ও সংস্কৃতি প্রচারের পাশাপাশি মহাবোধি সোসাইটি বিভিন্ন প্রকার জনহিতকর কাজেও অংশগ্রহণ করে। ১৮৯২ সাল থেকে সোসাইটি মহাবোধি নামে একটি জার্নাল প্রকাশ করছে। এটি শতাব্দীকাল ধরে সোসাইটির মুখপত্র হিসেবে এর কর্মকান্ড ও বুদ্ধবাণী প্রচার করছে এবং সাহিত্যক্ষেত্রেও মূল্যবান অবদান রাখছে।
সূত্র : বাংলাপিডিয়া
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/8/2020