কলকাতা মহানগর ঐতিহাসিক ভাবে নানা ধর্মের মিলন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে ও বিকশিত হয়েছে। আমাদের জানা সকল ধর্মেরই উল্লেখযোগ্য উপাসনা স্থল রয়েছে এই শহরে। প্রতিটিই তার স্থাপত্য, প্রাচীনত্ব ও ইতিহাসের সঙ্গে জুড়ে থাকার মধ্য দিয়ে ধর্মপ্রাণ মানুষের পাশাপাশি পর্যটক ও ইতিহাস প্রেমী মানুষের মনে স্থায়ী আসন করে নিয়েছে। গির্জাগুলির বিশেষত্ব হল, এগুলির সঙ্গে লেগে রয়েছে ঔপনিবেশিক ইতিহাস। সে ধর্মীয় দিক থেকেই হোক বা স্থাপত্যের দিক থেকে। তেমনই একটি গির্জা সেন্ট পল্স ক্যাথেড্রাল।
সেন্ট পল্স গির্জা ভারতের অন্যতম প্রধান ক্যাথলিক গির্জা। এটি কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের পূর্বে ময়দানের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত ক্যাথিড্রাল রোডে অবস্থিত। ১৮৩৯ সালে বিশপ ড্যানিয়েল উইলসনের উদ্যোগে শুরু হয়েছিল এর নির্মাণ। ৫ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছিল এই গির্জা তৈরি করতে। ১৮৪৭ সালের ৮ অক্টোবর এই গির্জাটি সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয় এবং এই গির্জা প্রাচ্যের প্রথম এপিসকোপাল চার্চের মর্যাদা পায়। সামরিক ইঞ্জিনিয়ার মেজর উইলিয়াম নেয়ারন ফোরবস এই গির্জার নকশা করেন। গির্জার টাওয়ার ও স্পায়ারের নকশা তৈরি করতে ফোরবসকে সাহায্য করেন সি কে রবিনসন। ইন্দো-গথিক শৈলীতে তৈরি এই গির্জা দৈর্ঘ্যে ২৪৭ ফুট, প্রস্থে ৮১ ফুট, উচ্চতায় ২০১ ফুট। ১৮৯৭ সালে ভূমিকম্পে গির্জার চূড়াটি ভেঙে পড়ে, তার এর পুনর্নিমাণ করা হয়। ১৯৩৪-এর ভূমিকম্পে ফের ধ্বংস হতে ক্যানটারবেরি ক্যাথিড্রালের হেনরি টাওয়ারের রেপ্লিকা রূপে ১৯৩৮-এ গড়ে ওঠে চুড়ো। বিশপ উইলসনকে উপহার দেওয়া মহারানি ভিক্টোরিয়ার কমিউনিয়ন প্লেটটি স্থান পেয়েছে সেন্ট পলসে। ক্যাথিড্রালের ভল্টেড ছাদ, ধনুকাকৃতি অপ্রশস্ত তীক্ষ্ণাগ্র জানলা, পুব দেওয়ালের রঙবেরঙের কারুকার্য, পশ্চিম দিকের জানলাটিতে ১৮৮০ সালে লর্ড মেয়োর সম্মানে স্যার এডওয়ার্ড বার্ন জোন্স-এর নকশা করা রঞ্জন (স্টেনড) কাচে সূর্যাস্তে সূর্যালোকের প্রতিফলন মনোহর। আর ফ্লরেন্টাইন ফ্রেস্কো দু’টি অনবদ্য। সকাল ৯টা থেকে ১২টা এবং বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা এই গির্জা।
সূত্র: পোর্টাল কনটেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/29/2020