পশ্চিমবঙ্গে বেড়ানোর জায়গা

‘বাংলার মাটি বাংলার জল’….সংস্কৃতি ও জাতিগত দিক থেকে পশ্চিমবঙ্গ ভারতের অন্যতম বৈচিত্র্যপূর্ণ রাজ্য। পশ্চিমবঙ্গবাসী বৃহত্তর ভারতের আত্মপরিচয় ও আশা আকাঙ্ক্ষার উত্তরাধিকার বহন করে চলেছে। অনেকেরই মনে আছে, ঔপনিবেশিক যুগের ধ্বংসাবশেষ থেকে এই রাজ্য কী ভাবে প্রগতিশীল বিকাশের পথে যাত্রা শুরু করেছিল। পশ্চিমবঙ্গের জনপদ অতীত কাল থেকে বহু উজ্জ্বল সকাল, অন্ধকার রাত্রির সাক্ষী থেকেছে। বহু সভ্যতা এই জনপদে তার পায়ের ছাপ রেখে গিয়েছে। সেই সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্যের হাত ধরেই পশ্চিমবঙ্গে নানা জাতি, সংস্কৃতি, ধর্ম, মানুষ ও ভাষার আবাসস্থল হয়ে উঠেছে, যা রাজ্যের অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সে জন্যই দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন এক সময় বলেছিলেন, ‘বাংলার মাটিতে এক চিরন্তন সত্য বিরাজ করছে।....অসংখ্য পরিবর্তন, বিবর্তন ও বিপ্লবের মধ্য দিয়ে সেই সত্য প্রকাশিত হয়েছে। সেই সত্য তার যাবতীয় অজ্ঞতা, অধার্মিকতা, স্বাধীনতা ও পরাধীনতার রূপগুলি নিয়ে সাহিত্য, দর্শন, কবিতা, যুদ্ধ, বিপ্লব ও কর্মে প্রতিফলিত হয়েছে। সেটাই বাংলার জীবন -- বাংলার মাটি ও বাংলার জল, সেই জীবনেরই বাহ্যিক প্রকাশ’।

ভৌগোলিক চেহারায় পশ্চিমবঙ্গ ভারতের প্রতিরূপ। ভারতের উত্তরে হিমালয়, দক্ষিণে সাগর। তেমনই পশ্চিমবঙ্গেরও উত্তরে হিমালয়, দক্ষিণে সাগর। এই বৈশিষ্ট্য একমাত্র পশ্চিমবঙ্গেরই। তাই প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে এই রাজ্য অতুলনীয়। এক দিকে যেমন মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে হিমালয়ের উত্তুঙ্গ পাহাড়শ্রেণি, অন্য দিকে নীল সমুদ্রের জল ধুয়ে দিচ্ছে এই রাজ্যের তটরেখা। রাজ্যের পশ্চিমে পুরুলিয়ার অনুচ্চ পাহাড়শ্রেণির আকর্ষণও কিছু কম নয়। ভারতের জাতীয় পশু রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল সুন্দরবন পেয়েছে ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’-এর তকমা। ডুয়ার্সের জঙ্গলে গণ্ডার, হাতি, চিতাবাঘের বাস। হাতি রয়েছে পুরুলিয়া-বাঁকুড়ার জঙ্গলেও। ইতিহাসপ্রেমীরা ছুটে যাবেন সিরাজের মুর্শিদাবাদে কিংবা শ্রীরামপুর-চন্দননগর-চুঁচুড়া-ব্যান্ডেলের এক টুকরো ইউরোপে। শুধু বিষ্ণুপুরই নয়, পোড়া মাটির অনন্য সম্পদ ছড়িয়ে আছে সারা রাজ্য জুড়ে। আর যে রাজ্যের বুক চিরে বয়ে গিয়ে সাগরে মিলেছে গঙ্গা, সেখানে কি তীর্থস্থানের অভাব হয়? এর ওপর রয়েছে রবিকবির গড়া শান্তিনিকেতন। আর সর্বোপরি কলকাতা তো আছেই, ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী।