উত্তর কলকাতার ১ উদ্বোধন লেনে রামকৃষ্ণ মঠের বাড়িটিই ‘মায়ের বাড়ি’ হিসাবে পরিচিত। এই বাড়ি রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের মুখপত্র ‘উদ্বোধন’-এরও অফিস।
সারদা মা দক্ষিণেশ্বর থেকে প্রায়ই কলকাতায় আসতেন। কিন্তু এখানে তাঁর থাকার জন্য কোনও স্থায়ী জায়গা ছিল না। শিষ্যরা খুব চিন্তায় পড়তেন। শেষ পর্যন্ত তাঁরা বাগবাজারে একটা জমি জোগাড়ে সমর্থ হন। এ দিকে ‘উদ্বোধন’-এরও কোনও স্থায়ী ঠিকানা ছিল না। বার বার ঠাই বদলের ফলে কাগজপত্র অনেক হারিয়ে যেত। ঠিক হল, নতুন জমিতে একটা টালির ঘর করে সেখানে ‘উদ্বোধন’-এর অফিস করা হবে। অবশেষে পাকা বাড়ি করে দোতলা তুলা মাকে সেখানে নিয়ে আসা হয়। তখন শিষ্যদের তেমন আর্থিক সঙ্গতি ছিল না। স্বামী বিবেকানন্দের রচনা বেচে ‘উদ্বোধন’-এর ছিল ২৭০০ টাকা। যা-ই হোক, সাহসে ভর করে কাজ শুরু করে দিলেন স্বামী সারদানন্দ। ব্যক্তিগত জামিনে ৫৭০০ টাকা ধার করলেন। তবে এতেও হল না। তাঁকে আরও টাকা ধার করতে হল। অবশেষে বাড়ি তৈরি হল। একতলায় ৬ খানা, দোতলায় ৩ খানা ও তিতলায় ১ খানা, মোট ১০ খানা ঘর তৈরি হল। এই বাড়িতে ‘উদ্বোধন’-এর অফিস স্থায়ী ভাবে এলো ১৯০৮-এর নভেম্বরে এবং নতুন বাড়িতে মা পদার্পণ করলেন ১৯০৯-এর ২৩ মে। গোড়া থেকেই উত্তর-পশ্চিমের একটা ঘর শ্রীরামকৃষ্ণের মন্দির করা হল। ঘরটির পূর্ব দিকে শ্রীরামকৃষ্ণের একটা ছবি রাখা ছিল। সেটিরই নিত্যপূজা হত। সিস্টার নিবেদিতা ওই ছবির মাথায় সিল্কের চাঁদোয়া তৈরি করে দিয়েছিলেন। এই ঘরের বাঁ দিকের ঘরে মায়ের থাকার ব্যবস্থা হয়। মা এসে কিছু পরিবর্তন করলেন। তিনি মন্দির-ঘরেই থাকবেন ঠিক করলেন। মায়ের কাছে সব সময় শ্রীরামকৃষ্ণের একটি ছবি থাকত। তিনি দক্ষিণেশ্বরে রোজ সেটির পুজো করতেন। এখানে এসেও মা সেই ছবি বেদীতে পশ্চিমমুখো করে বসিয়ে রোজ পুজো করতেন। এখন সেই ছবি রুপোর সিংহাসনে রাখা আছে। মায়ের সাঙ্গোপাঙ্গরা দোতলায় আর তিনতলায় থাকতেন। মা মাঝেমাঝেই ছাদে যেতেন চুল শুকোতে আর গঙ্গা দর্শন করতে। ছাদ থেকে দক্ষিণেশ্বরের মন্দির দেখা যেত। ১৯২০ সালের ২১ জুলাই মা দেহ রাখেন। তাঁর প্রয়াণের পর তাঁর জন্য নির্দিষ্ট ঘরটি মন্দির হয়েছে। মা যে খাটটি ব্যবহার করতেন, সেই খাটে মায়ের ছবি রাখা আছে।
নীচের তলায় প্রবেশপথের বাঁ দিকে যে ছোট ঘরটি আছে, সেটাই ছিল সারদানন্দের অফিস ঘর, বসার ঘর আর বিশ্রামের ঘর। এখানে বসেই তিনি পড়াশোনা ও লেখালেখি করতেন, লোকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন আর ‘উদ্বোধন’-এর যাবতীয় কাজ সামলাতেন। ‘শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ লীলাপ্রসঙ্গ’ নামে দু’ খণ্ডে শ্রীরামকৃষ্ণের জীবনী তিনি এই ঘরে বসেই লিখেছিলেন।
কাছেই গঙ্গা। মা নিয়মিত যেতেন গঙ্গাস্নানে। বাগবাজারে গঙ্গার যে ঘাতে মা স্নান করতেন সেই ঘাট আজ ‘মায়ের ঘাট’ নামে পরিচিত।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/29/2020