উত্তর কলকাতার শ্যামবাজার অঞ্চলে শ্যামপুকুর বাটী। মৃত্যুর আগের বছর ১৮৮৫-তে শ্রীরামকৃষ্ণ ৫৫ শ্যামপুকুর স্ট্রিটের এই বাড়িতে ৭০ দিন কাটিয়ে গিয়েছিলেন, ক্যান্সারের চিকিৎসা করার জন্য। ছিলেন ২ অক্টোবর থেকে ১১ ডিসেম্বর। সঙ্গে ছিলেন মা সারদা। সেই সময় সেই বাড়িতে শ্রীরামকৃষ্ণের ভক্তদের ভিড় লেগেই থাকত। স্বামী বিবেকানন্দ তখনও নরেন। নিয়মিত যাতায়াত করতেন শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে। শুধু তা-ই নয়, এই বাড়িতে রাতও কাটিয়েছেলিন তিনি। এত দিন এই বাড়িটি দেখাশোনা করে এসেছে শ্রীরামকৃষ্ণ স্মরণ সংঘ। ২০১০ সাল থেকে তাঁরা এই বাড়ি দেখভালের জন্য তুলে দেন বেলুড়ের শ্রীরামকৃষ্ণ মঠের হাতে। হস্তান্তর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের প্রেসিডেন্ট মহারাজ স্বামী আত্মস্থানন্দজি। এখানে একটি মিউজিয়াম রয়েছে। সেখানে শ্রীরামকৃষ্ণের ব্যবহৃত বহু জিনিস ও তাঁকে নিয়ে আঁকা বেশ কিছু ছবি আছে। কাছেই কালীপদ ঘোষের বাড়ি। সেখানে যে মার্বেল চৌকিতে বসে শ্রীরামকৃষ্ণ ভক্তদের সঙ্গে আলাপ করতেন সেই চৌকিটিও এই মিউজিয়ামে আছে। যে ক্যামেরা দিয়ে শ্রীরামকৃষ্ণের প্রথম ছবি তোলা হয়েছিল এবং ডার্করুমের যে সব যন্ত্র দিয়ে অবিনাশ চন্দ্র দাম সেই ছবি ডেভেলপ করেছিলেন, সেগুলোও এই মিউজিয়ামে প্রদর্শিত হয়েছে। এই বাড়িতেই শ্রীরামকৃষ্ণের সঙ্গে দেখা করতে সাহেবের ছদ্মবেশে এসেছিলেন নটী বিনোদিনী। কিন্তু তিনি ধরা পড়ে যান। শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁকে দু’ হাত ভরে আশীর্বাদ করেন। এই বাড়িতে বসেই শ্রীরামকৃষ্ণের কথা শুনতেন মহেন্দ্র গুপ্ত তথা শ্রী ম। পরে সেই সব কথাই শ্রী ম সংকলন করেন। প্রকাশিত হয় শ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত। এই বাড়িতে শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁর ভক্তদের কালীপুজোর আয়োজন করতে বলেন। দিনটা ছিল ১৮৮৫ সালের ৬ নভেম্বর। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ শ্রীরামকৃষ্ণ ধ্যানে বসেন। ভক্তকুল তাঁকে ঘিরে বসে আছে। উদয় হল নাট্যকার গিরিশচন্দ্র ঘোষের। হঠাৎ তিনি শ্রীরামকৃষ্ণের মধ্যেই কালী দর্শন করলেন। মা কালীর জন্য আনা সমস্ত ফুল তিনি ঢেলে দিলেন শ্রীরামকৃষ্ণের পায়ে। এ রকম অজস্র ঘটনার সাক্ষী এই শ্যামপুকুর বাটী। এই বাড়ি দেখলে মনে হবে তোমরা সেই সময়ে ফিরে গেছো।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/5/2020