৩ গৌরমোহন মুখার্জি স্ট্রিটে অবস্থিত স্বামী বিবেকানন্দর পৈতৃক ভিটে হিন্দু পুণ্যার্থীদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য। এই বাড়ির গাম্ভীর্য এবং জৌলুশ একে আলাদা আকর্ষণ দান করেছে। ১৮৬৩ সালের ১২ জানুয়ারি এই বাড়িতেই স্বামী বিবেকানন্দ জন্মগ্রহণ করেছিলেন। শৈশব ও প্রথম যৌবনে বিবেকানন্দ এই বাড়িতেই থেকেছিলেন।
১৮৮৪ সালে বিবেকানন্দের বাবা বিশ্বনাথ দত্তের মৃত্যুর পর এই বাড়িরই বাসিন্দা বিবেকানন্দের কাকিমা বাড়ির দখল নিতে চান। তিনি বিবেকানন্দের মা ভুবনেশ্বরী দেবী ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। নিম্ন আদালতে বিবেকানন্দের জয় হয়। কিন্তু মামলাটি পরে উচ্চ আদালতে ওঠে। হাইকোর্টে মামলাটি অনেক দিন চলেছিল। ১৯০২ সালে বিবেকানন্দের মৃত্যুর কিছু দিন আগে মামলাটির নিষ্পত্তি হয়। মামলায় রায়ে বিবেকানন্দ তাঁর পারিবারিক বাসস্থানের উপর পূর্ণ অধিকার পেয়েছিলেন।
পরে এই বাড়িটি ভেঙে পড়েছিল। ১৯৬২ সালে রামকৃষ্ণ মিশন কর্তৃপক্ষ এটি অধিগ্রহণ করে সংগ্রহালয়ে পরিণত করার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৯৯ সালে মিশন জমির দখল নেয় এবং পাশের কিছুটা জমিও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সাহায্যে পান। প্রকল্প রূপায়ণের জন্য একটি কমিটি গঠিত হয়। কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার ও জনসাধারণের দান থেকে এই কাজের জন্য কমিটি ১০ কোটি টাকা পায়। ২০০৪ সালে পুনর্গঠন কাজ শেষ হওয়ার পর এই বাড়িটির উদ্বোধন করা হয় ‘রামকৃষ্ণ মিশন স্বামী বিবেকানন্দ’স অ্যানসেসট্রাল হাউজ অ্যান্ড কালচারাল সেন্টার’ হিসাবে। এটি একটি সংগ্রহালয় ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসাবে পরিচিত পায়। এখন এই বাড়িতে সংগ্রহালয়, গবেষণা কেন্দ্র, স্মারক পূজাকক্ষ, গ্রন্থাগার, ইংরেজি শিক্ষাকেন্দ্র, কম্পিউটার শিক্ষাকেন্দ্র ও দাতব্য চিকিৎসাকেন্দ্র রয়েছে। নিয়মিত সেমিনার ও কনভেনশনও আয়োজিত হয়। স্বামী বিবেকানন্দর আধ্যাত্ম চিন্তা, বেদ, উপনিষদ সম্পর্কে তাঁর বাণী নিয়ে চর্চা করতে এবং উনবিংশ শতকে বাংলার নব জাগরণের প্রেক্ষিতে তার গুরুত্ব এবং আজকের দিনে তার প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে অধ্যয়ন করতে দেশ বিদেশের বহু গবেষক এখানে আসেন।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/27/2020