রবীন্দ্র সরণি ও মদন মোহন তলা স্ট্রিটের সংযোগ স্থলে অবস্থিত এই বাড়িটি ১৭৩০ সালে তৈরি। এই বাড়িটি ছিল গোকুল মিত্রের, যিনি ১৭৮৪ সালে লটারির মাধ্যমে চাঁদনি চক বাজারের স্বত্ব পেয়েছিলেন। এই বাড়িতে মদন মোহনের মূর্তি আছে, আছে একটি ঠাকুর দালান, যার স্তম্ভগুলি দোতলার উচ্চতার সমান। জনশ্রুতি, আর্থিক সমস্যায় পড়ে বিষ্ণুপুরের রাজা মদনমোহনের মূর্তিটি গোকুল মিত্রের কাছে বন্ধক রেখেছিলেন।
গোকুলচন্দ্র মিত্রের আদি বাড়ি ছিল বালিতে। তিনি বর্গি হামলার সময়ে কলকাতার বাগবাজার অঞ্চলে এসে বসতি স্থাপন করেন। লবণ ব্যবসায়ী গোকুলচন্দ্র খুব প্রচুর টাকা রোজগার করেন। ও দিকে ওই বর্গিদের হামলাতেই ক্ষতিগ্রস্ত বিষ্ণুপুরের মল্লরাজ চৈতন্য সিংহ জমিদারি রক্ষা করতে এক বিশাল অঙ্কের টাকা ধার নেন গোকুলচন্দ্রের কাছ থেকে। পরিবর্তে বন্ধক রাখেন কুলদেবতা মদনমোহনকে। প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে, ওই বিগ্রহ ছিল রাজবংশের সৌভাগ্যের প্রতীক। তাই অবস্থার ফেরে বন্ধক দিলেও চৈতন্য সিংহ টাকা শোধ দিয়ে কুলদেবতাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে আসেন। এ দিকে ঘটনাচক্রে মদনমোহন ঘরে আসার পর থেকে গোকুলচন্দ্রের অবস্থারও উন্নতি হতে থাকে। ধর্মীয় সংস্কারবশে তিনি বিগ্রহ ফেরত দিতে রাজি হলেন না। ঘটনা গড়াল আদালত পর্যন্ত। ইতিমধ্যে চতুর গোকুলচন্দ্র আরও একটি বিগ্রহ তৈরি করিয়ে রাখেন এবং বিচারের সময়ে চৈতন্য সিংহকে আসল মদনমোহন বিগ্রহ চিনে নিতে বলা হল। হুবহু এক রকম দেখতে দু’টি বিগ্রহের মধ্যে থেকে একটি বেছে বিষ্ণুপুরে নিয়ে গেলেন মল্লরাজ চৈতন্য সিংহ। আর অন্যটি রইল গোকুল মিত্রের কাছে, মিত্র পরিবারের কুলদেবতা হয়ে।
গোকুলচন্দ্র তাঁর এক বিঘেরও বেশি জায়গা নিয়ে তৈরি বাড়ির দোতলায় নতুন কুলদেবতার জন্য মন্দির তৈরি করলেন। এক তলায় তৈরি হল ঠাকুরদালান, বাড়ির পাশে আলাদা রাসমঞ্চ, দোল, ঝুলন, জন্মাষ্টমী, রাস প্রভৃতি অনুষ্ঠানে মদনমোহন ও রাধিকার বিগ্রহ ওই দালান-রাসমঞ্চে এনে বসানোর জন্য। গোকুল মিত্রের সেই ঠাকুরদালান আজও আছে। দোল, রাস উৎসব হয় সেখানে।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/22/2020