প্রথম শ্রেণির হেরিটেজ বিল্ডিং হিসেবে স্বীকৃত বর্তমান শোভাবাজার রাজবাড়িটি তৈরি করেছিলেন রাজা নবকৃষ্ণ দেব। এর ঠিকানা রাজা নবকৃষ্ণ স্ট্রিট। এর স্থাপত্যে একই সঙ্গে হিন্দু ও ঔপনিবেশিক ঐতিহ্য দেখতে পাওয়া যায়। তার জীবনকালে এই রাজবাড়ি বাংলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তিনি অন্যতম প্রথম কলকাতাবাসী, যিনি মহা ধুমধামের সঙ্গে দুর্গাপূজা করেন। সেটা ছিল ১৭৫৭ সাল। পলাশির যুদ্ধে ব্রিটিশরা সিরাজদ্দৌল্লাকে হারানোর পর এই পুজোর আয়োজন করা হয়।
এই শহরের ঐতিহ্যশালী পারিবারিক পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজো। রাজা নবকৃষ্ণের পিতা রামচরণ ব্যবহর্তা ছিলেন নবাব মুর্শিদকুলি খাঁর এক জন নিমক-কালেক্টর। পরে হন কটকের দেওয়ান। কিন্তু তিনি বর্গিদের হাতে মারা যাওয়ার পরে তাঁর বিধবা স্ত্রী তিন ছেলে ও পাঁচ মেয়েকে নিয়ে কলকাতার কাছে গোবিন্দপুর অঞ্চলে (এখনকার ফোর্ট উইলিয়াম) পালিয়ে আসেন। রামচরণের কনিষ্ঠ পুত্র নবকৃষ্ণ মায়ের উৎসাহে ইংরেজি, ফারসি ও আরবি শেখেন এবং তার ফলে প্রথমে ওয়ারেন হেস্টিংসের ফারসি শিক্ষক নিযুক্ত হলেন। পরে নিজের যোগ্যতা ও বুদ্ধি বলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মুনশির পদ লাভ করলেন। লর্ড ক্লাইভ তখন কোম্পানির প্রভাবশালী ব্যক্তি। নবকৃষ্ণ ক্রমে তাঁর কাছের লোক হয়ে উঠলেন। উত্তর কলকাতার শোভাবাজার অঞ্চলে তৎকালীন বড় ব্যবসায়ী শোভারাম বসাকের কাছ থেকে একটি প্রাসাদোপম বাড়ি নবকৃষ্ণ কিনেছিলেন আগেই। পলাশির যুদ্ধের পর সেই প্রাসাদের সঙ্গে নবকৃষ্ণ তৈরি করালেন দেওয়ানখানা, নাচঘর, লাইব্রেরি, নহবতখানা ইত্যাদি। আর একটি সুবিশাল সাত খিলানের ঠাকুরদালান। যুদ্ধজয়ের স্মারক হিসাবে তিনি ওই বছরেই ওই দালানে সূচনা করেন দুর্গোৎসবের। কলকাতার মানুষ সেই প্রথম দেখল, দুর্গাপুজোর মোচ্ছব কাকে বলে। রাজা নবকৃষ্ণই প্রথম ব্যক্তি, যিনি ধর্মীয় অনুষ্ঠান দুর্গোৎসবে সাহেবদের নিমন্ত্রণ করে নিয়ে আসেন। তাতে আমন্ত্রিতের তালিকায় ছিলেন লর্ড ক্লাইভের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা।
১৮৯৭ সালে বিবেকানন্দ শিকাগো বিশ্ব ধর্ম মহাসভা থেকে ফেরার পর তাঁকে এখানেই রাজা বিনয়কৃষ্ণ দেব বাহাদুর আনুষ্ঠানিক ভাবে সম্মানিত করেন।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/15/2020