গাড়ির পথ গেছে পানাগড় হয়ে। কলকাতা থেকে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে বরাবর পানাগড়। তার পর ‘দার্জিলিং মোড়’ থেকে ডান দিকে ঘুরে সোজা ইলামবাজারের পথে। না, ইলামবাজার যেতে হবে না। তার আগেই পড়বে বাঁ দিকের পিচ রাস্তা। এক সময় সেই পিচ রাস্তা শেষ হয়ে শুরু হবে লাল মাটির পথ, অজয় নদের ধার ধরে। পথ পৌঁছে যাবে ‘দেউল’-এ। ট্রেনেও যাওয়া যায়। নামতে হবে দুর্গাপুর স্টেশনে। এখান থেকে মিনিবাসে মুচিপাড়া স্টপ। সেখান থেকে ট্রেকারে শ্যামরূপার মন্দির হয়ে দেউল।
বর্ধমানের কাঁকসা থানার অধীনে গভীর জঙ্গলে ঘেরা গ্রাম। অতীতের ‘ঢেকুর’ নাম মুছে গিয়ে বর্তমান নাম গৌরাঙ্গপুর। জনবসতি নেই বললেই চলে। বয়ে গেছে অজয়। ও-পারে কবি জয়দেবের কেন্দুলি, আর এ-পারে শাল-অর্জুন-শিরীষ এবং বুনো গাছগাছালিতে ভরা গা ছমছমে জঙ্গল। এমনই জঙ্গলের মাঝে রয়েছে ইতিহাস প্রসিদ্ধ এক বিশাল শিবমন্দির। শ’খানেক ফুট উঁচু মন্দিরের গায়ে জীর্ণ টেরাকোটার নকশা আজও বহন করে চলেছে অতীতের স্মৃতি। এই মন্দিরই ইছাই ঘোষের দেউল নামে পরিচিত। এই মন্দিরের বয়স নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে কেউ কেউ মনে করেন দেউলটি ১৬শ/১৭শ শতকের। তার চেয়ে প্রাচীন নয়। এই দেউল থেকেই জঙ্গলের মধ্য দিয়ে পথ চলে গেছে ইছাই ঘোষের আরাধ্যা দেবী শ্যামরূপার মন্দিরে। একে বলে শ্যামরূপার গড়। তবে কয়েকটি সিঁড়ি আর মাটির ঢিবি ছাড়া গড়ের আর কোনও চিহ্ন নেই। আর শ্যামরূপার মন্দিরটি নতুন। দেবী এখানেই পূজিতা হন।
আসল আকর্ষণ পথ। দেউল থেকে ৪ কিলোমিটার ঘন জঙ্গলের মধ্য দিয়ে। এ পথে পথ ভুল করার আশঙ্কা পদে পদে। কারণ টুরিস্টদের গাড়ি ছাড়া এই পথে আর বিশেষ কোনও যান চলে না। আর কোনও জনবসতি নেই। তাই পথ বলে দেওয়ারও কেউ নেই। অবশ্যই দিনের আলো থাকতে থাকতে ঘুরে আসতে হবে শ্যামরূপার গড়।
বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় সুন্দর একটি থাকার জায়গা হয়েছে ‘দেউল’-এ। সুতরাং সপ্তাহান্তে বেড়াতে এলে অন্তত একটা রাত অবশ্যই কাটিয়ে যাবে এখানে।
সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 10/7/2019