পাহাড়ের গা ঘেঁষে পিচ রাস্তা। বাঁ দিকে পঞ্চকোট পাহাড় ক্রমশ মাথা তুলেছে। ডান দিকে ধানক্ষেত। পিচ রাস্তার শেষে আদিবাসী গাঁয়ের লাল মাটির পথ। সেই পথ ধরে, আদিবাসী ঘরসংসার ছুঁয়ে, তাদের উঠোন দিয়ে বনবাংলো ১০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে এলে পৌঁছে যাবে এক বিশাল মাঠে। আছে একটি মন্দিরের ভগ্নাবশেষ। সামনে ৬৪৬ মিটার উঁচু ১৮ বর্গ কিলোমিটার ব্যাপ্ত জঙ্গলাকীর্ণ গড়পঞ্চকোট পাহাড়। এখানেই ছিল গড়। তার চিহ্ন এখনও রয়েছে পাহাড়ের গায়ে সবুজের খাঁজে খাঁজে। চোখে পড়বে গড়ের ধ্বংসাবশেষ, ভাঙাচোরা পুরনো বাড়ি। পাহাড়ের দক্ষিণ ঢালে খননে টেরাকোটা, জোড়বাংলো, পাঁচ চুড়োর ৯টি মন্দির, গোপন কুটুরি, সুড়ঙ্গ ছাড়াও নানান অতীত আবিষ্কৃত হয়েছে। এক সময় মাইকেল মধুসূদন এখানে চাকরি করতেন পঞ্চকোট রাজার এস্টেট ম্যানেজার হিসাবে।
১০ কিলোমিটার দূরের বনবাংলোটি পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন নিগমের প্রকৃতি বীক্ষণ কেন্দ্র। পঞ্চকোট বা পাঞ্চেত পাহাড়ের শীর্ষে ওঠার পায়ে চলা পথের পাশে ইট, কাঠ বা বাঁশের এই বাংলোটি মনোরম। একটা-দুটো রাত কাটানোর সুন্দর জায়গা। এই প্রকৃতি বীক্ষণ কেন্দ্র থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের দক্ষিণ- পুব ঢালে কাশীপুর রাজার গড়া মন্দিরে বিরিঞ্চিনাথের লিঙ্গমূর্তি। সামান্য দূরে ডিভিসির ১৫ গেটের পাঞ্চেত বাঁধ। ১৯৫৬ সালে দামোদর নদের উপর গড়া এই বাঁধ ১৩৪ ফুট উঁচু আর ২২১৫৫ ফুট দীর্ঘ। এই বাঁধ থেকে গোধূলিতে সূর্যের পঞ্চকোট পাহাড়ের আড়ালে লুকিয়ে পড়ার দৃশ্যটি সারা জীবনের সঞ্চয়। পঞ্চকোটের নিকটতম স্টেশন কুমারডুবি। স্টেশন থেকে প্রকৃতি বীক্ষণ কেন্দ্র ১০ কিলোমিটার, আসা যায় অটোয়। আসানসোল থেকে ৩১ কিলোমিটার, বাস মেলে। বাস থেকে নেমে অল্প হেঁটে প্রকৃতি বীক্ষণ কেন্দ্র।
গোবাগ মোড় থেকে পাকা রাস্তা ধরে পাঞ্চেত জলাধারের দিকে যাওয়ার রাস্তায় ৩ কিমি দূরে রাস্তার দক্ষিণে ও পঞ্চকোট পাহাড়ের পশ্চিম দিকে পাহাড় থেকে একটি জলধারা পড়ছে যার স্থানীয় নাম ‘হদহদি’। হদহদির ১০০ মিটার দূরে মূল রাস্তা থেকে একটি রাস্তা পাহাড়ের ভিতর ঢুকেছে। বহু কাল আগে তৈরি হওয়া পঞ্চকোট পাহাড়ের একটি চূড়ায় যাওয়ার রাস্তা কিছু বছর আগে বন দফতর সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ করেছিল। এক সময়ে গাড়ি যাতায়াতের প্রচেষ্টায় রাস্তাটি তৈরি হলেও দীর্ঘ দিনের অবহেলায় গাড়ি চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। তবে ট্রেকিং-এর পক্ষে রাস্তাটি ভাল। পাহাড়ের চড়াই উতরাই পেরিয়ে এক দিকে গভীর খাদ নিয়ে পঞ্চকোটের বৈচিত্র্যময় শাল, মহুয়া, কেন্দুর জঙ্গলের ভিতর দিয়ে রাস্তাটি ৭ কিমি দূরে শেষ হয়েছে। গাড়ি থেকে হদহদির কাছে নেমে ৭ কিমি ট্রেক করে পৌঁছনো যায় ২১০০ ফুট উচ্চতায়। মূল রাস্তা থেকে বেশ ক’টি পায়ে চলা সুঁড়ি পথ পাহাড়ের এ-দিক ও-দিক চলে গেছে। হদহদি থেকে শুরু করে আবার একই জায়গায় ফিরে আসতে পুরো ট্রেকিংয়ে মোটামুটি চার-সাড়ে চার ঘন্টা সময় লাগে।
গড়পঞ্চকোটে থেকে ঘুরে আসা যায় ১৬ কিলোমিটার দূরের মাইথন। দেখে নেওয়া যায় মাইথনের প্রকৃতি আর দর্শন করে নেওয়া যায় মা কল্যাণেশ্বরীকে।
সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/22/2020