বাংলার হারিয়ে যেতে বসা পটচিত্রের শিল্পীদের গ্রাম। হাজার বছরের প্রাচীন এই শিল্পকে আঁকড়ে আজও বেঁচে আছেন মেদিনীপুরের পিংলা ব্লকের প্রত্যন্ত এই গ্রামের বাসিন্দারা। আগে গান, পরে হয় পট। মূলত দু’ধরনের পট তৈরি হয় - জড়ানো পট আর চৌকো পট। জড়ানো পটে কোন কাব্য, ঘটনা এই সব চিত্রিত হয়। আর নানান গল্পকথা শিল্পী ফুটিয়ে তোলেন চৌকো পটে।
বাংলার লোকসংস্কৃতির বহু পুরনো রীতি পটচিত্র অঙ্কন। এই পটচিত্রে নানা ধরনের গল্প লম্বা লম্বা গোটানো কাগজের ক্যানভাসের উপর নানা বর্ণে আঁকা থাকে। এই চিত্রশিল্পীরা বা পটুয়ারা গ্রামেগঞ্জে ঘুরে ঘুরে এই চিত্রগুলির উপর রচিত গল্পগাথাগুলি সুর করে গায় এবং ওই গোটানো কাগজের ক্যানভাস একটু একটু খুলে তার উপর আঁকা চিত্রগুলি দর্শকদের দেখায়। পট্ট কথাটি এসেছে সংস্কৃত থেকে, যার অর্থ কাপড়ের টুকরো এবং চিত্র মানে অঙ্কন। এই পটচিত্র শিল্পীদের ব্যবহৃত উজ্জ্বল রঙ, রেখা ও তুলির টানের জন্য বিখ্যাত। গোটানো ক্যানভাস খুলে পটের ছবি দেখাতে দেখাতে শিল্পীরা যে গান করেন তাকে বলে পটের গান। এই সব গানের কথা তাঁরা নিজেরাই বানান এবং সুর নিজেরাই দেন। এই গান পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে প্রবাহিত হয়।
আকারে-আয়তনে-বয়সে, নয়াগ্রামকে এখনও নেহাত কিশোরই বলা যায়৷ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পিংলা থানার অন্তর্গত এই গ্রামে সব মিলিয়ে বড় জোর পঞ্চাশ-পঞ্চান্নটা পরিবার! সর্বসাকুল্যে এই শিল্পী গ্রামের বয়স বড় জোর আশি! নয়াগ্রামের প্রায় সমস্ত বাসিন্দাই কোনও না কোনও ভাবে পট শিল্পের সঙ্গে জড়িত৷ পেট চালাতেও নয়াগ্রামের সম্বল একটাই – পটকথা৷ পটের গ্রামের নিকটবর্তী রেলস্টেশন বালিচক। বালিচক থেকে বাসে/গাড়িতে নয়াগ্রাম (পিংলা) আধ ঘণ্টার রাস্তা। কলকাতা থেকে সড়কপথে দূরত্ব ১২৫ কিলোমিটার। খড়গপুরগামী বাসে ডেবরায় নেমে সেখান থেকে ময়নার বাসেও নয়াগ্রাম যাওয়া যায়। স্থানীয় শিল্পীদের বাড়িতে থাকা যায়।
সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 9/12/2019