সুন্দরবন বেড়ানোকে দু’ভাগে ভাগ করা যায় – এক দিকে সুন্দরবন বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের ভগবতপুর, লোথিয়ান দ্বীপ, বনি ক্যাম্প, কলস ক্যাম্প, অন্য দিকে সুন্দরবন টাইগার রিজার্ভের সজনেখালি, সুধন্যখালি, দোবাঁকি থেকে একেবারে বুড়ির ডাবরি পর্যন্ত। বিশ্বের বৃহত্তম ব-দ্বীপ ও বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য ।
সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার ক্যানিংয়ের দূরত্ব কলকাতা থেকে মাত্র ৪০ কিমি। ১৯৮৯ সালে বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ ও ১৯৯৭ সালে ওয়ার্ল্ড ন্যাচারাল হেরিটেজ সাইটের তকমা পায় সুন্দরবন। সুন্দরবন বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভকে গ্লোবাল বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। সুন্দরবনের খ্যাতি বাংলার বাঘ- রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের জন্য। তবে বাঘ ছাড়াও চিতল হরিণ, নানা প্রজাতির সাপ আর নানান পাখির মেলা সুন্দরবনে। জলে কুমির, কামট, কচ্ছপ। নামখানা থেকে ২০ কিমি দূরে লোথিয়ান দ্বীপের ভগবতপুরে কুমির প্রকল্প গড়ে উঠেছে। ভগবতপুর থেকে ৩০ কিমি অরণ্যের গভীরে সুন্দরীকাটি ইকো ট্যুরিজম সেন্টার। ঠাকুরান নদী ধরে বঙ্গোপসাগরের কোলের কাছে শেষদ্বীপ চুলকাটি বা কলস দ্বীপ। কলস থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টার জলপথে বনি ইকো-ক্যাম্প। ক্যানিং থেকে অথবা বাসন্তি-সোনাখালি হয়ে লঞ্চে পৌঁছনো যায় সুন্দরবন টাইগার রিজার্ভের সজনেখালিতে। সজনেখালি থেকে ট্যুরিস্ট পারমিশন আর গাইড নিয়ে লঞ্চে ভেসে পড়তে হবে টাইগার রিজার্ভের অন্য জায়গাগুলি ঘুরে দেখার জন্য। সজনেখালিতে ম্যানগ্রোভ ইন্টারপ্রিটেশন সেন্টার, ওয়াচ টাওয়ার, পাখিরালয়, কুমির পুকুর, কচ্ছপ পুকুর, কামট পুকুর, বনবিবির মন্দির প্রভৃতি দর্শনীয়। যাওয়া – সুন্দরবনের সব চেয়ে কাছের বড় শহর কলকাতা। নিকটতম রেলস্টেশন নামখানা । শিয়ালদহ স্টেশন থেকে কাকদ্বীপ ও নামখানার লোকাল ট্রেন ছাড়ে। কলকাতা থেকে ট্রেন বা বাসে কাকদ্বীপ হয়ে নামখানা। সেখান থেকে লঞ্চে বা নৌকায় সুন্দরবন বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের দিকটা বেড়িয়ে নেওয়া যায়। সুন্দরবন টাইগার রিজার্ভের দিকে যেতে হলে শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে ক্যানিং পৌঁছে বা কলকাতার বাবুঘাট থেকে বাসে বাসন্তী-সোনাখালি পৌঁছে, সেখান থেকে লঞ্চে উঠতে হবে। পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন ও বিভিন্ন বেসরকারি পর্যটন সংস্থা প্যাকেজ ট্যুরে সুন্দরবন বেড়াতে নিয়ে যায়। বড় দলে গেলে ক্যানিং বা সোনাখালি থেকে নিজেরা লঞ্চ ভাড়া করেও ঘোরা যায়। পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগমের চিত্ররেখা ও সর্বজয়া লঞ্চে সুন্দরবন প্যাকেজের ব্যবস্থা রয়েছে।
সুন্দরবন টাইগার রিজার্ভ বেড়ানোর সব চেয়ে রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা লঞ্চে রাত্রিবাস। তবে সজনেখালিতে থাকার নানান ব্যাবস্থাও আছে। জেটি ঘাটের কাছেই পশ্চিমবঙ্গ পর্যটনের সজনেখালি ট্যুরিস্ট লজ। গোসাবাতে হোটেলেও থাকা যায়। এ ছাড়া গোসাবা দ্বীপের পাখিরালয় গ্রামে জেলা পরিষদের ট্যুরিস্ট লজ আছে। পি ডব্লু ডি ও সেচ দফতরের বাংলোও আছে গোসাবায়। পাখিরালয়ের কাছেই টেগোর সোসাইটি ফর রুরাল ডেভেলপমেন্টের গেস্টহাউস। পাখিরালয়েও বেশ কিছু হোটেল আছে। নামখানায় থেকে লঞ্চে বেড়িয়ে নেওয়া যায় সুন্দরবন বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের দিকটা। ভগবতপুরে থাকার তেমন ভালো ব্যবস্থা নেই। তবে কাকদ্বীপ সেচ দফতর থেকে সীতারামপুর বাংলো বুক করে রাতে থাকা উচিত হবে। বনি ও কলস ক্যাম্পেও থাকা যায়। সুন্দরবনে প্রবেশে অনুমতি প্রয়োজন – চিফ কনসারভেটর অব ফরেস্ট, গভর্নমেন্ট অব ওয়েস্ট বেঙ্গল, থার্ড ফ্লোর, পি-১৬ ইন্ডিয়া এক্সচেঞ্জ প্লেস, কলকাতা-৭০০০০১ বা ফিল্ড ডিরেকটর, সুন্দরবন টাইগার রিজার্ভ, ক্যানিং, সাউথ ২৪ পরগনা। বিদেশিদের অনুমতি মিলবে সেক্রেটারি, ডিপার্টমেন্ট অব ফরেস্ট অ্যান্ড ট্যুরিজম, গভর্নমেন্ট অব ওয়েস্ট বেঙ্গল, রাইটার্স বিল্ডিং, কলকাতা-৭০০০০১।
সুন্দরবনের মধু বিখ্যাত। সজনেখালির বিট অফিস থেকে কেনা যায়। অক্টোবর থেকে মার্চ বেড়ানোর সেরা সময়।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/30/2019
সুন্দরবন পশ্চিমবঙ্গের একটি অন্যতম প্রধান পর্যটন কে...